সড়ক, নৌ ও রেলপথে
যাতায়াতে দুঃসহ ভোগান্তি থেকে বাঁচতে দেশের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের ৮০ শতাংশ টিকিট বিক্রি
হয়েছে। আগামী চার-পাঁচদিনের মধ্যে বাকি টিকিট বিক্রি শেষ হতে পারে। যাত্রী চাহিদা বাড়লে
ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে এয়ারলাইন্সগুলো।
নিরাপদ ও আরামদায়ক
যাতায়াতে যাত্রীদের প্রথম পছন্দ বিমান। এখন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা
ও নভোএয়ার দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে দিনে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার যাত্রী পরিচালনা করে।
এর মধ্যে আসন্ন ঈদুল ফিতরে নীলফামারীর সৈয়দপুর, যশোর, রাজশাহী ও বরিশালের টিকিট চাহিদা
বেশি। চট্টগ্রাম এবং সিলেটে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় টিকিট চাহিতা বাড়ছে। যাত্রী চাহিদা
না থাকায় ঈদের আগে কক্সবাজারে ফ্লাইট কমছে। তবে ঈদের পর টানা এক সপ্তাহ কক্সবাজারে
টিকিট চাহিদা রয়েছে।
বিমান সংস্থাগুলো
জানিয়েছে, করোনার কারণে গত দুই বছর বিমানে যাত্রী পরিবহনে নানা বিধিনিষেধ ছিল। এবার
আসন্ন ঈদের ছুটিতে আকাশপথে যাতায়াতে কোনো বিধিনিষেধ নেই। ফলে বিগত বছরের তুলনায় বিমানে
যাত্রী চাহিদা বাড়ছে। যাত্রীদের স্বস্তিতে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে বিমান সংস্থাগুলো কাজ
করছে। তবে জেট ফুয়েলের দাম বাড়ায় বিমানের টিকিটের দাম অনেক বাড়ছে। সরকার জেট ফুয়েলের
দাম কমালে বিমান আরও জনপ্রিয় হবে।
ইউএস-বাংলা: দেশে
অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাংলাদেশি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।
২০১৪ সালের ১৭ জুলাই দুটি উড়োজাহাজ দিয়ে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। এখন
সংস্থাটির বহরে ১৩টি অত্যাধুনিক এয়ারক্র্যাফট রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও তারা যাত্রী
পরিবহন করছে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স
সূত্র জানায়, আগামী ২ বা ৩ মে পবিত্র ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য তারিখ ধরে সৈয়দপুর, যশোর,
রাজশাহী, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কক্সবাজার ফ্লাইটের টিকিট বিক্রি চলছে। এক থেকে
দেড় মাস আগ থেকে এই টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ৭০ শতাংশ টিকিট বিক্রি শেষ।
কয়েকটি গন্তব্যে ৮০ শতাংশ টিকিট শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ২৮, ২৯, ৩০ ও ১ মে টিকিট প্রায়
শেষ পর্যায়ে।
আগামী ২৯ এপ্রিল
ঢাকা-সৈয়দপুর ও ৪ মে সৈয়দপুর-ঢাকা টিকিট কিনেছেন তেজঁগাওয়ের মনিপুরিপাড়ার বাসিন্দা
সোহেল রানা। তিনি বলেন, ঈদের সময় সড়কপথে সৈয়দপুর যেতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত সময়
লাগে। ভাড়াও অনেকটা বেশি। তাই সময় বাঁচাতে এবং আরামদায়ক যাতায়াতে এক মাস আগেই বিমানের
টিকিট নিয়েছেন তিনি।
জানতে চাইলে ইউএস-বাংলা
এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর ঈদের ছুটিতে বিমানে
যাতায়াতে নানা বিধিনিষেধ ছিল। এখন তেমন কোনো বিধিনিষেধ নেই। স্বাচ্ছন্দ্যে যাত্রীরা
যাতায়াত করতে পারবেন। তবে ঈদের আগ দিয়ে যাত্রী চাহিদা বাড়লে ফ্লাইট বাড়ানোর পরিকল্পনা
রয়েছে।
তিনি বলেন, ঈদের
পরও তাদের এয়ারলাইন্সে যাত্রী চাপ রয়েছে। বিশেষ করে ৪ থেকে ৮ মে ঢাকামুখী টিকিট বেশি
বিক্রি হয়েছে।
নভোএয়ার: নভোএয়ারও
দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ২৫টি ফ্লাইট পরিবহন করছে। এবার ঈদে সৈয়দপুর, যশোর, রাজশাহী
ও বরিশালে টিকিট চাহিদা বেশি রয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, আগামী ২৮, ২৯, ৩০ ও ১ মে ফ্লাইটের
টিকিট গড়ে ৮০ শতাংশ বিক্রি হয়ে গেছে। যে টিকিট আছে, সেগুলোর ভাড়া ক্রমেই বাড়ছে। যেমন-
স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম টিকিট সর্বনিম্ন ২৫০০ টাকা থাকলেও এখন তা চার হাজার
ছাড়িয়ে গেছে। এভাবে ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, টিকিটের দামও বাড়ছে।
নভোএয়ারের মার্কেটিং
অ্যান্ড সেলস বিভাগের প্রধান মেজবাহ-উল-ইসলাম
বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আরও মাসখানেক আগ থেকে ২৮, ২৯, ৩০ এপ্রিল ও ১ মে এর
টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ৮০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়েছে। যাত্রী চাহিদা বাড়লে
তারাও ফ্লাইট বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন।
বিমান বাংলাদেশ
এয়ারলাইন্স: দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন গন্তব্যে দিনে ২০-২৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান
বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তারাও এক মাস আগে থেকে ঈদের সময়ের টিকিট বিক্রি শুরু করেছে। এই
এয়ারলাইন্সেও রাজশাহী, যশোর ও সৈয়দপুর রুটে বিমানের টিকিটের চাহিদা বেশি। এ ছাড়া ঈদের
দ্বিতীয় দিন থেকে পরবর্তী সাতদিন কক্সবাজার ও সিলেটের টিকিটের চাহিদা বেশি রয়েছে।
আগামী ২৮ এপ্রিল সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ঢাকা-চট্টগ্রাম ফ্লাইটের টিকিট কিনেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তারেক হাসান। তিনি বলেন, করোনার বিধিনিষেদের কারণে গত দুই বছর ধরে মানুষ গ্রামে ঈদ করতে পারেনি। এবার তারা সবাই গ্রামে যাবেন। ফলে সড়কপথে ভয়াবহ যানজট তৈরির শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ট্রেনে টিকিট পাবেন না অনেক যাত্রী। লঞ্চেও প্রায় একই চিত্র হবে। তাই আগেভাবে আকাশপথে যাতায়াতে টিকিট কেটে নিয়েছি।
গত ১৭ এপ্রিল
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
এই সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির জানিয়েছে, এবার করোনার প্রকোপ কমে আসায় ঈদুল ফিতরে দ্বিগুণ
মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবে।
জেট ফুয়েলের দাম
বাড়ায় টিকিটের দাম বাড়ছে: ৭ এপ্রিল উড়োজাহাজে ব্যবহৃত জ্বালানি জেট ফুয়েল লিটারে ১৩
টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এখন এক লিটার জেট ফুয়েল কিনতে
খরচ হচ্ছে ১০০ টাকা। এতে অভ্যন্তরীণ সব রুটে বিমানের টিকিটের দাম বাড়ছে।
দেশের বিমান সংস্থাগুলো
জানিয়েছে, করোনা মহামারির এই দুই বছরে জেট ফুয়েলের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
গত ৮ মার্চ প্রতি লিটার ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৮৭ টাকা হয়েছে। এর এক মাস আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি
জ্বালানিটির দাম ৭৩ টাকা থেকে ৮০ টাকা করা হয়েছিল। এভাবে নানা অজুহাতে কিছুদিন পরপরই
অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে জেট ফুয়েলের দাম বাড়াচ্ছে বিপিসি। ফলে ফ্লাইট পরিচালনায় ব্যয় বাড়ছে।
সঙ্গে টিকিটের দামও বাড়ছে।
বেসরকারি বিমান
সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন,
গত তিন মাসে জেট ফুয়েলের দাম ২৫ টাকা বেড়েছে। এভাবে গত ১৮ মাসে মোট দাম বেড়েছে ৫৪
টাকা। ফলে জ্বালানির বাড়িত দাম সমন্বয় করতে হচ্ছে টিকিটের দাম বাড়িয়ে।
তিনি বলেন, করোনার
আগে ঢাকা-যশোর টিকিটের দাম ছিল সর্বনিম্ন দুই হাজার ৭০০ টাকা। এখন একই রুটের ভাড়া
বেড়ে চার হাজার ৮০০ টাকা হয়েছে। তাই দেশের বিমান সংস্থাগুলোকে টিকিয়ে রাখতে এবং যাত্রীদের
স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত নিশ্চিত করতে জেট ফুয়েলের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে হবে।