মো: আফসার খাঁন, কালিয়াকৈর (গাজীপুর)
ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে আত্মার পরিশুদ্ধি, ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সৌহার্দ্য ও সংহতি প্রকাশের এক উদার উৎসব। এ উৎসবে প্রায় ঘরেই রান্না হয়ে থাকে গরুর গোশত। কিন্তু বর্তমানে বাজারে দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোর জন্য গরুর গোশত কেনা এখন অনেকটাই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এই কষ্টসাধ্য ব্যাপারকে সহজ করতে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিভিন্ন গ্রামে গড়ে উঠেছে গোশত সমিতি। এটা ‘গরিবের গোশত সমিতি’ নামেই বেশী পরিচিত। ঈদ ঘিরে সাধারণ মানুষের কাছে এ সমিতি এখন ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
এলাকাবাসী ও গোশত সমিতি সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ এক মাস রোজা রেখে, সংযমের সাধনা করে, তবেই মুসলমানরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করে। তাই এ ঈদের আনন্দটাও একটু বেশি। এ উপলক্ষ্যে নতুন জামা-কাপড়, সেমাই, মেহেদী, নেলপালিশসহ বিভিন্ন উপকরণ কিনেন সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষ। সর্বশেষ পর্যায়ে সবারই একটু ভালো মানের খাবারের আশংকা । তাই প্রায় ঘরেই গরুর গোশত বা ভালো কিছু রান্না হয়। কিন্তু নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোর জন্য গরুর গোশত কেনা অনেকটাই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এই কষ্টসাধ্য ব্যাপারকে সহজ করতে এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গোশত সমিতি গঠন করেছে কিছু মানুষ। এটা ‘গরিবের গোশত সমিতি নামেই বেশি পরিচিত। উপজেলার বড়ইবাড়ি, কোটামনি, পাইকপাড়া, দীঘিবাড়ি, বাড়ইপাড়া, জালশুকা কাঞ্চনপুর, মহরাবহ, বড়ইছুটি, ছোট লতিফপুর বাগানবাড়ি, লতিফপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে এ সমিতি গড়ে উঠেছে।
প্রতিটি সমিতির সদস্য সংখ্যা ৩০ থেকে ৭০ জন। সদস্যরা সপ্তাহে ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদা দেন। কেউ কেউ পুরো টাকা একত্রে দেন। বছরব্যাপী সামান্য করে টাকা সমিতিতে চাঁদা হিসেবে জমা করে। আর ঈদুল ফিতরের ১ থেকে ৪দিন আগে জমা করা টাকায় গরু কিনেন। পরে সেই গরু জবাই করে মাংস ভাগ করে নেন সমিতির সদস্যরা। তবে চামড়া বিক্রির টাকায় পরের বছরের জন্য তহবিল গঠন করে সমিতির কার্যক্রম চলে।
এতে গরীব পরিবারগুলো বাড়তি আনন্দ পায় এবং তাদের আর্থিক চাপও কমে যায়। গত কয়েক বছর ধরে ঈদুল ফিতরকে ঘিরে গ্রামে গ্রামে এরকম অনেকগুলো সমিতি গড়ে উঠেছে। গরুর গোশতের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকায় দিন দিন সমিতির সংখ্যা বাড়ছে। এখন শুধু নিম্ন ও মধ্যবিত্তই নয়, এ সমিতিতে যোগ দিয়েছেন ধনীরাও। ফলে ঈদ ঘিরে সাধারণ মানুষের কাছে 'গরিবের গোশত সমিতি' এখন ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
বড়ইবাড়ী গ্রামের লেবু মিয়া, লতিফপুরের উজ্জ্বল, জুয়েল বলেন, গত ১০/১৫ বছর আগে বড়ইবাড়ি ও কোটামনি গ্রামের আমরা ২০-২৫ জন মিলে ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে নাট্যিকা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতাম। ওই অনুষ্ঠান থেকেই আমরা নিম্ন ও মধ্যবিত্তের লোকজন গোশত সমিতির উদ্যোগ নেই। এরপর আমাদের দেখে ওই দুই গ্রামে আরো কয়েকটি সমিতি গড়ে উঠেছে। আমরা প্রথমে ইয়াং জেনারেশনরা এই উদ্যোগটা নেই। পরে এলাকাবাসী আমাদের সাথে সমিতিতে ভর্তি হয়। এবার আমরা ১৭কেজি করে একেক জন গোশত পেয়েছি। বর্তমানে এর ব্যাপক সাড়া মিলছে।আমাদের এই সমিতির বেশির ভাগ সদস্য রিকশা চালক এবং দরিদ্র লোক গুলোই রয়েছে। তবে মধ্যবিত্তও একটা অংশ আমাদের সাথে সমিতিতে আছে।
কোটামনি গ্রামের কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। ঈদে পোলাপানগো কাপড়-চোপড় কিনা টেকা শেষ অইয়া যায়। কোনো মতে চিনি-সেমাই কিনি। আবার গোশত কিনুম কেমনে? যখন জানলাম সমিতি হয়েছে, তখন সমিতিতে নাম দিয়েছি। পাইকপাড়া গ্রামের সুরুজ মিয়া বলেন, আমাদের সমিতিতে ৭০ জন সদস্য। এ সমিতি হওয়ায় গরিব মানুষের জন্য ভালো হয়েছে। সপ্তাহে ১০০ টাকা চাঁদা দিতে কষ্ট হয় না। ঈদ এলে আর বাড়তি চিন্তা থাকে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, নিঃসন্দেহে এটা একটা ভালো উদ্যোগ। বছরব্যাপী টাকা সঞ্চয় করে ঈদের আগে গরু কিনলে সাধারণ মানুষের বেশি বেগ পেতে হয় না। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সবাই ঈদে ভালো খাবারও খেতে পারলো। এ সময় উপজেলাবাসীকে ঈদ মোবারক জানান তিনি।