“মরিবে যখন- কাঁদিবে ভুবন, হাসিবে তখন”। কথাটি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে একাধিকবার নির্বাচিন প্রেসিডেন্ট প্রয়াত খন্দকার মাহবুব হোসেনের ক্ষেত্রে একান্ত অপরিহার্য। তার মৃত্যুতে বিচার অঙ্গণে অপরিসীম শুন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। এ শুন্যতা কখনো পূরন হবার নয়। খন্দকার মাহবুব হোসেন ছিলেন তরুন আইনজীবীদের শিক্ষক ও অভিভাবক। তার মৃত্যুর আবেগঘন পরিবেশ বিদ্যমান রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গণে।
খন্দকার মাহবুব হোসেন এন্ড এসোসিয়েশনের উদ্যোগে গতকাল সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির রুমের সামনে অনুষ্ঠিত শোক বই উন্মোচন অনুষ্ঠানের সমিতির সভাপতি সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির একথা বলেন।
শোক বই উন্মোচন অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সমিতির সম্পাদক মো. আবদুন নুর দুলাল, সাবেক সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী, খন্দকার সোহেল মাহমুদ, আবেদ রাজা, ফখরুল ইসলাম, শিশির মনির, মাসুদ রানা প্রমুখ। শোক বই উন্মোচন পরবর্তীতে খন্দকার মাহবুব হোসেনের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা মহান প্রজ্ঞাময় আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সিনিয়ার আইনজীবী আবেদ রাজা।
শোক বই উন্মোচন পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট কাজী রেজাউল হোসেন বলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন ছিলেন- আইন অঙ্গণের একজন অভিভাবক। মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে কখনো কখনো বিচারপরিতও আইনজীবীরা তার কাছ থেকে মতামত গ্রহণ করতেন। আদালতের রায়ের প্রতি খন্দকার মাহবুব হোসেনের অপরিসীম শোদ্ধা ও ভালবাসা দেখাতেন। একথায় খন্দকার মাহবুব হোসেনকে জ্ঞানের ভান্ডার বলা যেতো। আইন শিক্ষা গ্রহণ ও প্রয়োগে খন্দকার মাহবুব হোসেন ছিলেন যত্নশীল।
প্রসঙ্গত সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন গত ৩১ ডিসেম্বর শনিবার রাত পৌনে ১১টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় পরলোকগণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। খন্দকার মাহবুব হোসেন চার দফায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দু’বার দায়িত্ব পালন করেছেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে মামলা লড়তেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।
খন্দকার মাহবুব হোসেনের জন্ম ১৯৩৮ সালের ২০ মার্চ বরগুনার বামনায়। ১৯৬৭ সালে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। পরে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবেও তিনি তালিকাভুক্ত হন। ১৯৭৩ সালে দালাল আইনে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। অবশ্য পরে ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হলে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের পক্ষে আদালতে আইনি লড়াই চালিয়েছিলেন তিনি।