আসন্ন দুর্গাপূজা
উদযাপন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার নেতৃবৃন্দের
সাথে এক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আসন্ন দুর্গাপূজায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পক্ষ থেকে চার স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রোববার (৮ অক্টোবর) দুপুরে দামপাড়া পুলিশ লাইনস্থ মাল্টিপারপাস শেডে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় সভাপতিত্বে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
এসময় বাংলাদেশ
পূজা উদযাপন পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি এবং সকল থানার পূজা উদযাপন
কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সদস্যবৃন্দের সাথে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা ২০২৩ উপলক্ষ্যে
নিরাপত্তা সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকায় শারদীয় দুর্গাপূজা
সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের
সাথে পূজা উদযাপনের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়। পূজা উদযাপনকালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বাত্মক সহযোগিতার
আশ্বাস দেন পুলিশ কমিশনার।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশিষ কুমার ভট্টাচার্য বলেন, দূর্গাপূজাকে প্রাণবন্ত, সুন্দর ও নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে সম্পন্ন করতে সবধরনের প্রস্তুতি চলছে। সুন্দরভাবে মায়ের আগমনী ও পূজার অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করবো। এই বছর কিছু পূজা মন্ডপ বেড়েছে। গত সারা বাংলাদেশে প্রায় পূজা মন্ডপে হামলা ও আতংক সৃষ্টি হয়েছিল। সামনে নির্বাচনকে ঘিরে একটা মহল অঘটন করার চেষ্টা চালাবে, এ ব্যাপারে সরকার ও প্রশাসন সর্তক রয়েছে। তবুও আমাদের সকল থানা কমিটি নিয়ে একটা সমন্বয় করবো। চকবাজার শিব মন্দির নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের সাথে বৈঠকে বসবো। পতেঙ্গা বিচটা একটু নিরাপত্তা দরকার, কারণ এটা বিসজ্জন ও পর্যটন জন্য এলাকাটি আর্কষণীয়। পতেঙ্গায় প্রতিমা বিসজ্জন হিসাবে থাকার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা চায়। সব পূজা মন্ডপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও থাকবে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক থাকবে।
চট্টগ্রাম মহানগর
পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, ধর্মীয় আচার অনুযায়ী
পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। আমাদের চাওয়া মন্ডপে কোনো ধরনের ডিজে অনুষ্ঠান এবং মাইকে
হিন্দি গান বাজানো চলবে না। বিসজ্জনের স্থান যাতে পরিবর্তন না হয়৷ পতেঙ্গা ও রানী রাসমনি
ঘাট ঠিক থাকবে। থিম ও ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী পূজা হবে, ডিজে গান সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। এসব আমরা বিষযে কাউন্সিলিং করাবো। গাড়িতে
সাউন্ড সিস্টেম বাজাতে না পারে, সেজন্য প্রশাসন এ ব্যাপারে দৃষ্টি দেবেন।
সিএমপির অতিরিক্ত
পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) এম এ মাসুদ বলেন, আরতী করার পরে সময়টাকে নিরাপত্তা
রাখা দরকার। এসময় স্বেচ্ছাসেবক ও পুলিশকে সর্তক থাকতে হবে। জেনারেটর ও পানির ব্যবস্থা
রাখা দরকার, যাতে কোন ধরনের নিরাপত্তা ঘাটতি না থাকে। ষষ্ঠী থেকে সিসি ক্যামেরা ও নিরাপত্তা
ব্যবস্থা রাখতে হবে।
সিএমপির কমিশনার
কৃষ্ণপদ রায় বলেন, আমরা আগের অভিজ্ঞতা থেকে এই অপতৎপরতা প্রতিহত করবো। মহানগর এলাকায়
দেড় হাজার ফোর্স মোতায়েন থাকবে। সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে সহায়তা করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
এবার ২৯৩টি পূজা মন্ডপে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সেজন্য স্বেচ্ছাসেবক ও পুলিশ, সোয়াত
টিম, র্যাব, আনসার থাকবে। বৈদ্যুতিক তারের মাধ্যমে অগ্নি সূত্রপাত যাতে সৃষ্টি না
হয়, সে ব্যাপারে সর্তক থাকা প্রয়োজন। কোন ধরনের
ডিজি পার্টি হবে না, ধর্মীয় নিয়মে মাধ্যমে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। বিদ্যুৎ বিকল্প হিসেবে
জেনারেটর থাকতে হবে। ট্রাফিক পুলিশকে সবসময় নির্দেশনা থাকবে, পূজা কমিটির কোন পরামর্শ
থাকলে, সেটা তারা গ্রহণ করবে। বিসজ্জনের স্থানটি আর্কষণীয় ও ঐতিহ্যগতভাবে অনুষ্ঠিত
হয়েছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী আগমন নিয়ে সেসব নিরাপত্তা থাকা বাহিনীর সাথে কথা বলে
সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কোন খারাপ পরিস্থিতি আভাস নেই।
পূজা মন্ডপের
ধরন অনুযায়ী প্রতিবছরের ন্যায় এবারও চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রতিটি মন্ডপে পুলিশ এবং
আনসার বাহিনীর সদস্যরা সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়াও র্যাব সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার
দায়িত্ব পালন করবেন। তাৎক্ষণিক অগ্নিকান্ড নিয়ন্ত্রণে ও প্রতিমা বিসর্জনের সময় ফায়ার
ব্রিগেডের বিশেষ টিম সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।
সভায় সিএমপি’র পক্ষ থেকে উপস্থিত পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের প্রতি প্রতিটি পূজামন্ডপ
কেন্দ্রিক স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন ও টিমের সদস্যদেরকে সার্বক্ষণিক পালাক্রমে নিরাপত্তা
ডিউটিতে মোতায়েন এবং তাদের পরিচিতি জন্য নির্ধারিত পোশাক, আইডি কার্ড, আর্ম-ব্যান্ড
পরিধানের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
এছাড়াও পূজা
মন্ডপে দর্শণার্থী প্রবেশের সুবিধার্থে মহিলা ও পুরুষদের জন্য আলাদা আলাদা প্রবেশ ও
বহির্গমন পথের ব্যবস্থাকরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় নিরাপত্তার স্বার্থে বড় বড় প্রতিটি
পূজা মন্ডপে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন, মেটাল ডিটেক্টর, ফায়ার এক্সটিংগুইশার ও জেনারেটরের
ব্যবস্থা রাখার জন্য নেতৃবৃন্দের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। তদুপরি আজান ও নামাজের সময়
মন্ডপের সাউন্ড সিস্টেম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার জন্য সকলের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানানো
হয়। শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনকালীন সমগ্র মহানগরীতে মন্ডপ কেন্দ্রীক মাদক, ছিনতাই এবং
ইভটিজিং প্রতিরোধে পুলিশি অভিযান কার্যক্রম জোরদার, টহল বৃদ্ধি, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা
নজরদারি এবং উর্ধ্বতন অফিসার কর্তৃক নিয়মিতভাবে প্রতিটি পূজা মন্ডপ পরিদর্শনের মাধ্যমে
নিরাপত্তা প্রদানে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে কমিশনার মহোদয় সকলকে আশ্বস্ত
করেন। তাছাড়াও পূজা মন্ডবের আশেপাশে অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং, মেলা, রাস্তার উপর দোকান-পাট
না বসানোর জন্য নগরবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন এবং জরুরি সেবা পেতে ৯৯৯ যোগাযোগ
করার জন্য আহবান জানান।
এসময় উপস্থিত
ছিলেন সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) এম এ মাসুদ; অতিরিক্ত পুলিশ
কমিশনার (ট্রাফিক) আবদুল মান্নান মিয়া, বিপিএম-সেবা; উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) মোঃ আব্দুল
ওয়ারীশ, মহানগর পূজা থানা কমিটি নেতৃবৃন্দ ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।