অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার জনগণের আস্থা অর্জন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ভারত। বিভিন্ন জরুরি পণ্যের অভাব মোচন করতে দেশটিকে অর্থ দিচ্ছে নয়া দিল্লি। এছাড়া শ্রীলঙ্কায় জ্বালানি তেল, ওষুধ ও সার সরবরাহ করছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এভাবে দেশটির জনগণের মন জয় করতে চাচ্ছে ভারত। ভারত মহাসাগরে কৌশলগত অবস্থানের জন্য শ্রীলঙ্কার সাথে অনুকূল কূটনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্কের জন্য গত ১৫ বছর ধরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ভারত ও চীন। যদিও দেশটির জনগণের মন জয়ের ক্ষেত্রে অনেক আগেই ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে চীন। তবে, শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশটিতে ভারতের পররাষ্ট্র নীতি নতুন জীবন পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
১৯৪৮ সালে ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর শ্রীলঙ্কা বর্তমানের মতো এমন চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েনি। দেশটি খাদ্য ও জ্বালানির ঘাটতির কারণে জনমনে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। নিত্যপণ্যের অভাব ও দামবৃদ্ধির কারণে জনগণ রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে। এমন সংকটের মধ্যেই মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এরপর ৯ মে রাতে রাজাপাকসের সমর্থক ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘাত বাধে। এরপর থেকে দেশটিতে একটি ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে।
এখন রনিল বিক্রমাসিংহে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু তিনি বলেছেন, ‘শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সমস্যা আগের চেয়েও প্রকট হবে।’ এখন তিনি ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করেছেন।
শ্রীলঙ্কায় ভারত কখনই চীনের মতো বড় ঋণদাতা ছিল না। কিন্তু এখন, ভারত দেশটির অন্যতম বড় সহায়তা প্রদানকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কলম্বো এখন ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক ঋণে আবদ্ধ। এই ঋণগুলোর পরিষেবার জন্য বর্তমানে তাদের ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করতে হবে। আগামী বছরও একই পরিমাণ টাকা তাদের পরিশোধ করতে হবে। দেশটি এখন জ্বালানির মতো প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জরুরি ঋণও চাইছে। দেশটির এমন সহায়তা দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক ছয় শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে। অপরদিকে ভারত ১.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং জরুরি পণ্য আমদানির জন্য আরো ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিতে পারে।
বর্তমানে শ্রীলঙ্কাকে ভারত ৬৫ হাজার টন সার ও চার লাখ টন জ্বালানি পাঠিয়েছে। মে মাসের পরে আরও জ্বালানি পাঠানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ এছাড়া দেশটিতে চিকিৎসা সামগ্রী পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। এসব সহায়তার বিনিময়ে ভারত একটি চুক্তি করেছে, যার মাধ্যমে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনকে ব্রিটিশ-নির্মিত শ্রীলঙ্কার ত্রিনকোমালি তেল ট্যাঙ্ক খামারে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। এছাড়া ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ত্রিনকোমালির কাছে এক শ’ মেগাওয়াট পাওয়ারের প্ল্যান্ট নির্মাণ করতে চায়।