আয়াতুল্লাহ আকতার:
দেশের মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড) ক্রান্তিকালের লকডাউনের কারণে দু’ সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট থেকে পুনরায় দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চ চলা শুরু হবে আগামীকাল থেকে। সাশ্রয়ী অর্থ ব্যয় ও আরামদায়ক লঞ্চ ভ্রমণের সুবিধার্থে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে অভ্যান্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। অন্যদিকে লঞ্চ মালিক ও সংস্থা যাত্রীদের সুবিধার্থে লঞ্চ ধোঁয়া মোছা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে। পাশাপাশি যাত্রীরাও নৌ- যাত্রার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ব্যবসা ও স্থায়ীভাবে বসবাসরত দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার সিংহভাগ মানুষ অতীতের ধারাবাহিকতা এবারও পবিত্র ঈদ যাত্রা লঞ্চে সম্পন্ন করার কথা ভাবছে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলাদেশে ২৪ হাজার বর্গকিলোমিটারের মতো নৌপথ ছিলে। জলবায়ুর প্রভাব ও নদীতে বাঁধ দেয়ার কারণে শুষ্ক মৌসুমে এখন নৌপথ থাকছে মাত্র সাড়ে ৪হাজার বর্গকিলোমিটারের মতো। আর বর্ষাকালে নৌ-পথ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার কিলোমিটারে ন্যায়। স্বাভাবিক অবস্থায় সদরঘাট লঞ্চ টামিনাল থেকে ৬০টির মতো লঞ্চ দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষ করে সমুদ্রের উপকুল থেকে যাত্রী ও মালামাল বহন করে। ঈদের সময় লঞ্চের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় কিছু লঞ্চ দু’টি ট্রিপও প্রদান করে। এ বছরও ঈদের ছুটি উপলক্ষে যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে সরকার সব ধরণের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতে কথা বিবেচনায় রেখেছেন।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আজকের দর্পণকে বলেন, রাজধানীর প্রধান নদী বন্দর সদরঘাট থেকে ৪৫টি রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করছে। আগামীকাল ১৫ জুলাই বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর থেকে সদরঘাট থেকে যাত্রীবাহী বহুতল বিশিষ্ট লঞ্চ যাত্রীও মালামাল পরিবহণ শুরু করছে। তবে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন পল্টুনে গিয়ে আটকে পড়া লঞ্চগুলো পূর্বের ন্যায় একটু আগে (বিকালে) দিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতে পারবে। কারণ সারারাত নদীতে চালু অবস্থায় থাকার পর ওই লঞ্চগুলোকে প্রতুষ্যে ঢাকায় পৌঁছে।
সরকার নদীবন্দর বিশেষ করে লঞ্চঘাটের পন্টুনে নিরাপত্তা বিষয়টি আগের মতো মনিটরিং করছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও অতীতের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দায়িত্ব পালনে সক্রিয় রয়েছে। তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাস জনিত কারণে লঞ্চ স্টাফ ও যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চে চলাচলের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়- বিষয়টি সরকারিভাবে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার বৈঠাকাটা টু ঢাকা রুটের লঞ্চ এমভি আওলাদ লঞ্চের নিরাপত্তা কর্মী মো. হেমায়েত হোসেন বলেন, করোনার প্রেক্ষিতে সরকার ঘোষিত লকডাউনে লঞ্চটি বৈঠাকাটায় আটকা পড়েছিল। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বৈঠাকাটা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে সকালে সদরঘাটে পৌছা সম্ভব হবে। লকডাউনে প্রায় ১৫ দিন বন্ধ থাকার পর লঞ্চের ধোয়া মোছার কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছি।
ঈদুল আজহার উৎসবে গ্রামের বাড়ি যাওয়া প্রসঙ্গে যাত্রাবাড়ীর ডেন্টাল কেয়ারের সত্ত্বাধিকারী ডা. আরিফুল ইসলাম বলেন, গাড়ীতে চলাচলের ঝুঁকি থাকে বেশি। তাই গত বছরের মতোও এবারও লঞ্চে বাড়ি যাওয়ার মনোস্থির করেছি। দু’ এক দিনের মধ্যে টিকেট নিশ্চিত করা হবে।
বেসরকারি সংস্থা নৌ-সড়ক ও রেলপথ রক্ষা কমিটির আহবায়ক আশীস কুমার দে বলেন, আমাদের গবেষণায় প্রতিদিন সদরঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৪০ হাজারের মতো যাত্রী দক্ষিণাঞ্চলের যাতায়াত করে। আর ঈদের সময় যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনাও ঘটে। আমাদের প্রত্যাশা মহামারি করোনা জনিত কারণে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী কোন অবস্থাতেই বহন করা ঠিক হবে না। সরকারকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। নৌ-সড়কও রেলপথ যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ আন্দোলন করে যাচ্ছে।