রাজিব মাসুদ, ফেনী
পর্যটকদের উচ্ছ্বাসে প্রাণ ফিরে পেয়েছে ফেনীর বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলো। ঈদের দিন বিকাল থেকে নৈসর্গিক সৈন্দর্য্যের লীলা ভূমি খ্যাত সোনাগাজীর কয়েকটি পর্যটন স্পটে হাজার হাজার পর্যটকের পদচরাণায় হয়ে উঠেছে মুখরিত। দক্ষিণা বাতাসে গা এলিয়ে মনের সুখে প্রকৃতির কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ। নাচে-গানে, আনন্দ-উল্লাসে প্রকৃতির ভালোবাসায় সিক্ত যেন পর্যটকের দল। সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রিয়জনদের নিয়ে ঘুরতে আসা পর্যটকদের মাঝে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ছুটে আসছেন সব বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরেরা। বেশ জমে উঠেছে পর্যটন স্পটগুলো।
দুপুরের প্রচণ্ড দাপদাহ আর বিকালের নির্মল বাতাসে পর্যটকদের যেন প্রাণ জুড়িয়ে আসে। প্রচণ্ড গরমে কেউ কেউ লেবুর শরবত পান করে তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন। কেউ কেউ নদীর পানিতে সাঁতার কাটছেন। আবার কেউ কেউ নৌকা ভাড়া করে নদীর এপার-ওপার পাড়ি দিচ্ছেন। কিশোর, তরুণ ও যুবকরা ফুটবল খেলছেন দলে দলে। কেউবা আবার মনের সুখে গান ধরছেন একা একা। ক্ষণে ক্ষণে আবার কিশোরদের হৈ হুল্লোড় পর্যটকদের মনে ভীতির সঞ্চার করলেও পর্যটকদের নিরাপত্তায় পালা করে নিয়োজিত রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা।
ফলে পর্যটন স্পটগুলোতে কোন প্রকার হয়রানি ছাড়া পর্যটকরা নির্বিঘ্নে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করছে। আর পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ায় ঈদের ছুটিতে সোনাগাজীর পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের তিল ধারণের ঠাই নেই।ঈদের দিন বিকাল থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে পর্যটন স্পটগুলোতে। সোমবার ঈদের তৃতীয় দিনেও সে ভিড় অব্যাহত ছিল।
পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে সোনাগাজীর মুহুরী প্রজেক্ট একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে প্রতিদিনই হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমাচ্ছেন। এখানে মুহুরী সেচ প্রকল্পের ৪০ জলকপাট, বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মৎস্য ঘের, জোয়ার-ভাটার পানি এবং ফেনী নদীর দু'কূল বেয়ে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতেই ছুটে আসছেন পর্যটকরা। দেশের সর্ববৃহৎ নির্মাণাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চল 'বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর'। এখানে গড়ে উঠছে অসংখ্য শিল্প কারখানা। নয়নাভিরাম এই শিল্পাঞ্চল দেখতে ছুটে আসছেন দেশী-বিদেশী পর্যটকদের দল। ছোট ফেনী নদীর উপকণ্ঠে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় নির্মাণ করা হয়েছে মুছাপুর ক্লোজার। অর্থাৎ বন্যা ও জোয়ারের পানি নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। গড়ে তোলা হয়েছে কৃত্রিম লেক। রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা ঝাউবাগান। জেগে ওঠেছে সবুজ ঘাসের চর। সবুজ ঘাসে বসে গল্পে মাতোয়ারা বন্ধুরা। নদীতে জোয়ার-ভাটার দৃশ্য, লেকে নৌকা-ট্রলার ও স্পিডবোট নিয়ে পর্যটকদের আনন্দ উল্লাস চোখে পড়ার মতো। ছোট নদীর উপরে সাহেবের ঘাট নির্মাণের ফলে ফেনীর সোনাগাজী ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জবাসীর মাঝে রচিত হয়েছে সেতুবন্ধন।
একসময়ের এ খরস্রোতা নদী পাড়ি দিতে গিয়ে ভেসে যাওয়া বহু প্রাণ আজও ফিরে আসেনি। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই নদীতে ২.৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ সেতুটি নির্মাণের ফলে নদীর দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে প্রকৃতির এক লীলা ভূমি। নদীতে চলছে সারিরি সারি নৌকা। সেতুতে ও তার আশাপাশের কাশবনে কেউবা ছবি তুলছে গ্রুপ করে আবার কেউ তুলছে নিজস্বী (সেলফি)। কেউ আবার নানা অঙ্গভঙ্গির আনন্দে মাতোয়ারা। নির্মল বাতাসে প্রশান্তির সিঁড়িতে বসে প্রিয়জনদের সাথে কেউ কেউ গল্পে মেতেছেন ঘন্টার পর ঘন্টা। সবাইকে যেন প্রকৃতির এই সৌন্দর্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে। প্রকৃতির ডাকে যে সকল পর্যটকরা ছুটে যাচ্ছেন তারা যেন আনন্দে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাচ্ছেন। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যায়ও যেন তারা ঘরে ফিরতে নারাজ। রাত ১০টা অবদি চলছে পর্যটকদের প্রাণের উচ্ছ্বাস।
উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের স্বরাজপুর গ্রামের প্রবাসী সাখাওয়াত উল্লাহ আরিফ বন্ধুদের নিয়ে ছুটে গেছেন উপজেলার তিনটি পর্যটন স্পটে। পর্যটকদের ভিড়ে যেমনি তিনি বিমোহিত, তেমনি প্রকৃতির টানে তিনি যেন প্রকৃতির সাথেই মিলিয়ে যান। নির্মল বাতাস আর প্রকৃতির ভালোবাসা তাকে বাড়িতে থাকতেই যেন দিচ্ছেনা। রাত পোহালেই ছুটে যান এসব পর্যটন স্পটে।তিনি বলেন, অপার সম্ভাবনাময় সোনাগাজীতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পর্যটন কেন্দ্র বা বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠলে একদিকে সরকারের যেমন রাজস্ব আয় বাড়বে, অন্যদিকে পর্যটক বা বিনোদন প্রেমিদের নজর কাটবে।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি খালেদ হোসেন বলেন, ঈদ উপলক্ষে পর্যটন কেন্দ্র সমুহে পর্যটকরা যেন নির্বিঘ্নে আনন্দ উপদযাপন করতে পারে সেজন্য নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বিশেষ করে নারীদের যৌনহয়রানী রোধে পুলিশের বিশেষ টিম মোতায়েন করা হয়।
সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, পর্যটন স্পটগুলো ঢেলে সাজাতে ও বিনোদন প্রেমিদের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে আরও প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এছাড়া ফেনী শহরের কাজিরবাগস্থ ইকোপার্ক ও রাজাঝি দিঘীস্থ শিশুপার্ক এবং বিজয় সিংহ দিঘী ও ছাগলনাইয়ার বাশেরকেল্লায় ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভীড় দেখা দিছে।