কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা বিক্রি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। টিকা প্রযুক্তি ভাগাভাগি না করা, উচ্চমূল্য ও দরিদ্র দেশগুলোয় অপর্যাপ্ত টিকা সরবরাহ নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ চাপের মুখে পড়ে। এ অবস্থায় মুনাফা ছাড়াই দরিদ্র দেশগুলোয় টিকা বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে ফাইজার। সব পেটেন্ট ওষুধ বিশ্বের ৪৫টি দরিদ্রতম দেশে অলাভজনক ভিত্তিতে বিক্রি করবে মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্টটি। এর মধ্যে কভিডের চিকিৎসায় প্যাক্সলোভিড ও স্তন ক্যান্সারে বহুল ব্যবহূত ওষুধ ইব্রেন্স অন্তর্ভুক্ত। দরিদ্র এ দেশগুলোয় উদ্ভাবনী চিকিৎসাসামগ্রীর অভাব রয়েছে। দাতব্য সংস্থা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন অনুসারে, স্বল্প আয়ের দেশগুলোয় নতুন চিকিৎসা সহজলভ্য হতে চার-সাত বছর বেশি সময় লাগতে পারে। যদিও এক্ষেত্রে শর্ত থাকে সেখানে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে।
ফাইজার জানিয়েছে, এ পরিকল্পনার আওতায় ২৩টি সম্পূর্ণ মালিকানাধীন, পেটেন্ট ওষুধ ও টিকা রয়েছে। এগুলো সংক্রামক রোগ, নির্দিষ্ট ক্যান্সার এবং বিরল ও প্রদাহজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। প্যাক্সলোভিড ও ইব্রেন্স ছাড়াও তালিকায় রয়েছে নিউমোনিয়ার টিকা প্রিভনার ১৩, রিউমাটয়েড অর্থ্রাইটিসের ওষুধ জেলজাঞ্জ এবং ক্যান্সারের ওষুধ জালকোরি ও ইনলিটা। জার্মান বায়োটেকনোলজি কোম্পানি বায়োএনটেক এসইর সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি কভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা কমিরনাটিও দরিদ্র দেশগুলোয় মুনাফা ছাড়াই বিক্রি করবে ফাইজার।
সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী অ্যালবার্ট বোরলা একটি সাক্ষাত্কারে বলেন, দরিদ্র দেশগুলোয় যে ওষুধগুলো সহজলভ্য হতে যাচ্ছে, সেগুলো দ্রুতই ব্যবহার শুরু হবে বলে আশা করছি। তবে স্পষ্টতই অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ প্যাক্সলোভিড সরবরাহের জন্য দেশগুলোর সঙ্গে একটি বড় চুক্তি হতে যাচ্ছে। যদি ওষুধটি প্রয়োজন হয়, তবে তারা অবিলম্বে এটির সরবরাহ পাবে। পরবর্তী সময়ে ফাইজার নতুন ওষুধ ও টিকা উন্মোচনের সঙ্গে সঙ্গেই সেগুলো অলাভজনক মূল্যের ড্রাগ পোর্টফোলিওতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ২৭টি নিম্ন আয়ের এবং ১৮টি নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে কম মূল্যে ওষুধ সরবরাহের এ উদ্যোগকে ফাইজার স্বাস্থ্যকর বিশ্বের জন্য একটি ঐক্য হিসেবে অভিহিত করেছে। এ তালিকায় আফ্রিকার বেশির ভাগ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি এ ঘোষণা দেয়। এরই মধ্য পাঁচটি দেশ রুয়ান্ডা, ঘানা, মালাউই, সেনেগাল ও উগান্ডা এ চুক্তিতে যোগদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মালাউইয়ের প্রেসিডেন্ট লাজারাস চাকভেরা একটি বিবৃতিতে বলেছেন, এ চুক্তি লাখ লাখ মুনষের জীবন বাঁচাতে পারে এমন ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি এটি দেশ ও ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাকে সরবরাহের ব্যয় ও কাজের বোঝা ভাগাভাগি করে নেয়ার সুযোগ দেবে।
কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা সরবরাহ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে ফাইজার। কারণ সংস্থাটি টিকা প্রযুক্তি ভাগাভাগি করতে সম্মত হয়নি এবং দরিদ্র দেশগুলোয় সংস্থাটির টিকা পেতে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে। যদিও ধনী দেশগুলো আগেভাগে সংস্থাটির টিকার সরবরাহ পেয়েছে। অ্যালবার্ট বোরলা বলেন, নতুন চুক্তিতে টিকা সরবরাহের অসুবিধাগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষ করে কিছু দেশে স্বাস্থ্য অবকাঠামোর অভাব টিকা বিতরণকে কঠিন করে তুলেছে। আমি আমাদের দায়ভার অস্বীকার করছি না। আমি আপনাকে পণ্যটি দিচ্ছি এবং আপনি প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো ব্যবহার করুন। আমাদের ভাষ্য হলো, আমরা আপনাকে পণ্যগুলো দেব এবং সেগুলো সঠিকভাবে প্রয়োগে কীভাবে একটি পদ্ধতি দাঁড় করানো যায়, তা নিয়ে আপনাদের সঙ্গে বসব।