সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে ট্রায়াল ট্রেন সাতকানিয়া হয়ে কক্সবাজার স্টেশনে যাবে। নবনির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলতে যাচ্ছে এদিন।
ট্রায়াল রানের উদ্দেশ্যে আসা স্পেশাল ট্রেন বর্তমানে পটিয়া স্টেশনে অবস্থান করছে। ট্রায়ালের আগের দিন পটিয়া থেকে ট্রায়াল ট্রেনটি দোহাজারী নিয়ে রাখা হবে।
কালুরঘাট সেতু মেরামতের কাজ শুরুর আগে পটিয়া রেল স্টেশনে নিয়ে রাখা হয়েছে ট্রায়াল ট্রেনটি। উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ছয়টি বগি ও একটি ২২শ সিরিজের ইঞ্জিন। কোরিয়া থেকে আনা এসব একেকটি বগিতে যাত্রী বসতে পারবে ৬০ জন।
জানা গেছে, দোহাজারী–কক্সবাজার রেল লাইনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী রোববারের মধ্যে ১০১ কিলোমিটার লিকিংয়ের কাজ শেষ হবে। ১৫ অক্টোবর দোহাজারী থেকে পরীক্ষামূলক ট্রায়াল ট্রেন উদ্বোধন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় পাওয়ার ওপর আগামী ২৮ অক্টোবর এ রেলপথ উদ্বোধন হতে পারে।
প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, আগামী বছরের ২৪ জুন পর্যন্ত এই প্রকল্পের মেয়াদ থাকলেও তার আগে আগামী ডিসেম্বরের দিকে পুরোপুরি কাজ শেষ হবে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালানোর জন্য তার আগেই বুঝিয়ে দেওয়া যাবে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার লাইনের মধ্যে মোট প্রকল্পের কাজ ৮৯ শতাংশ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া এলাকার দিকে প্রায় চার কিলোমিটার কাজ বাকি আছে। তা চলতি মাসেই শেষ হবে।
অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, ট্রায়াল রানের পরও বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহনে যেতে আরো দুই–তিন মাস লাগবে। এ বছরের মধ্যেই এই রেলপথে আমরা ট্রেন চালুর চেষ্টা করব।
তিনি বলেন, দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার– এসব স্টেশনে থাকবে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম। দোহাজারী থেকে চকরিয়া এবং চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথে ৩৯টি ব্রিজ ও আন্ডারপাসসহ ২৫১টি কালভার্ট নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে জনবল, ইঞ্জিন ও বগি সংকটের কারণে শুরুতে মাত্র এক জোড়া ট্রেন চালানোর প্রস্তাব করেছে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের কার্যালয়। অর্থাৎ একটি ট্রেন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার যাবে এবং ওই ট্রেনটিই আবার ফিরবে। দুটি বিকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, ট্রেনটি রাতে ঢাকা থেকে যাত্রা করে পরের দিন সকালে কক্সবাজারে পৌঁছাবে। সেই ট্রেন পরের দিন ঢাকায় ফিরবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্বিঘ্নে ট্রেন চলাচলের জন্য কালুরঘাট সেতুটি দ্রুত সংস্কার করা হচ্ছে। সেতুটি আরো মজবুত করা হচ্ছে। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কাজ করছে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে।
জানা গেছে, ট্রেনটি চলাচলের সময় নির্ধারণ করতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দুটি প্রস্তাবনা রেল ভবনে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে যেকেনো একটি ধরেই ট্রেন চলাচল শুরু হবে। প্রথম প্রস্তাবনায় রয়েছে ট্রেনটি ঢাকা থেকে রাত ৮টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে ভোর সাড়ে ৫টায় কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছাবে। ফিরতি পথে সকাল ১০টায় কক্সবাজার স্টেশন থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছবে। দ্বিতীয় প্রস্তাবনায় ঢাকা থেকে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে সকাল সাড়ে ৯টায় কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছাবে। ফিরতি পথে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে রাত ১০টায় ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে পৌঁছাবে। তবে ভাড়া এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার। এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।