আওয়ামী লীগের এখন প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগই। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগকেই ধরাশায়ী করেছে। প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা প্রায় ৭৭ শতাংশ ইউনিয়ন পরিষদ বিজয়ী হলেও শেষ ধাপের নির্বাচনে মাত্র ২৭ শতাংশে বিজয়ী হয়েছে। আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভরাডুবির প্রধান কারণ আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ। শুধু তৃণমূলের নয়, আওয়ামী লীগ এখন যেন বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে। শুধু প্রতিপক্ষ হয়ে ক্ষান্ত হয়নি, আওয়ামী লীগের নেতারাই একে অন্যের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বিভিন্ন অসত্য এবং অর্ধসত্য তথ্য সরবরাহ করছেন এবং এগুলোর ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। আর এসবের ফলে আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতারাই স্বীকার করেছেন।
২০ ফেব্রুয়ারি নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এ কাউন্সিল অধিবেশন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নাটোরের এমপি এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক একটি ব্যানার লাগিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ব্যানারটি নামিয়ে ফেলেন আরেকজন এমপি'র সমর্থক গোষ্ঠী। এটি আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সর্বশেষ দৃষ্টান্ত বলে অনেকে মনে করছেন। উল্লেখ্য যে, নাটোর সদরের সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল এবং তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। শুধু নাটোর নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে এরকম বিরোধ পাওয়া যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী করতে হয়েছে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে এই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত শামীম ওসমানকে নিষ্ক্রিয় করতে পেরেছিলেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে না হয় শামীম ওসমানকে আপাত নিষ্ক্রিয় করা গেলো, সারা দেশে কি হবে?
চাঁদপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল, সেই দুর্নীতির অভিযোগের পুরোটাতেই মদদ যুগিয়েছেন চাঁদপুরেরই আরেক এমপি। তিনি এ নিয়ে গণমাধ্যমে এবং তার ফেসবুকেও স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। পিরোজপুর থেকে গত নির্বাচনে মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তার বদলে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল সুপ্রিমকোর্টের প্রথিতযশা আইনজীবী শ ম রেজাউল করিমকে। মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি মন্ত্রীও হয়েছেন। কিন্তু সেখানকার রাজনৈতিক কর্তৃত্ব এখনো আব্দুল আউয়ালের হাতেই। যার ফলে দেখা যাচ্ছে যে, পিরোজপুর-১ আসন শুধু অশান্ত থাকছে না, এমনকি এখন শ ম রেজাউল করিমের চরিত্র হননের চেষ্টা হচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ক'দিন আগেই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে কিছু মনগড়া, অসত্য, ভিত্তিহীস মন্তব্য দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে যে, এই প্রতিবেদন করার পিছনে অন্যপক্ষ না, বরং তার নির্বাচনী এলাকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাই জড়িত ছিলেন। আর এই একই রকম ঘটনা ঘটছে দেশের অন্যান্য স্থানে। সাম্প্রতিক সময়ে সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রবল আকার ধারণ করেছে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। আর আওয়ামী লীগ যদি তার এই অভ্যন্তরীণ কোন্দলগুলো বন্ধ না করতে পারে তাহলে পরে তাহলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্যও এক অশনী সংকেত অপেক্ষা করছে বলেই অনেকে মনে করেন।
সূত্র: BANGLA INSIDER