বিদায়ী বছরের সবশেষ মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি এক মাসের ব্যবধানে দশমিক ১৪ শতাংশ কমেছে। এ সময় শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি মূল্যস্ফীতি পরিলক্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাসভিত্তিক মূল্যস্ফীতি প্রতিবেদনে তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, ডিসেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশে নেমেছে। নভেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং অক্টোবরে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। এর আগে আগস্টে মূল্যস্ফীতি ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে উঠে আসে।
বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, খাদ্য খাতে ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৯১ শতাংশে, নভেম্বরে যা ছিল ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। এছাড়া গত মাসে খাদ্যবহির্ভূত খাতেও মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশে নেমেছে, নভেম্বরে যা ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। গত মাসে গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আর শহরে ৮ দশমিক ৪৩ শতাংশে। যেসব খাদ্যপণ্য গ্রামে উৎপাদন হয় তার দাম গ্রামেই বেশি, কিন্তু শহরে কম। মাছ, মাংস, সবজি, মসলা ও তামাকজাতীয় পণ্যের দাম কমায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। পাশাপাশি কমেছে বাড়ি ভাড়া, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি, চিকিৎসা সেবা, পরিবহন ও শিক্ষা উপকরণের দামও।
এদিকে ডিসেম্বরে বিভিন্ন খাতের শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ, যা আগের দুই মাসের তুলনায় বেশি। অক্টোবরে মজুরি সূচক ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং নভেম্বরে ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ কর্মসংস্থান হয় অনানুষ্ঠানিক খাতে। তাদের আয় মজুরিভিত্তিক। বাস্তবতা হলো বিবিএস মূল্যস্ফীতি কমার খবর দিলেও স্বস্তি নেই মজুরি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে। মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বাড়লেও মজুরি সে হারে বাড়েনি। গত ডিসেম্বরে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। কিন্তু জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে প্রায় পৌনে ৯ শতাংশ। মানুষ ব্যয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আয় করতে পারছে না। তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। বাজার থেকে আগের মতো পণ্য কিনতে পারছে না।
বিবিএস প্রতি মাসে কৃষি শ্রমিক, পরিবহন কর্মী, বিড়ি শ্রমিক, জেলে, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিকসহ ৪৪ ধরনের শ্রমিকের মজুরির তথ্য সংগ্রহ করে মজুরি হার সূচক তৈরি করে। এর মধ্যে শিল্প খাতের ২২ ধরনের এবং কৃষি ও সেবা খাতের প্রতিটিতে ১১ ধরনের পেশা অন্তর্ভুক্ত। এসব পেশাজীবীর মজুরি ও দক্ষতা কম। করোনায় এসব শ্রমিকই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।