বিএনপি চেয়ারপারসন
বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে ফের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে
আবেদন করেছেন তার পরিবার। একইসঙ্গে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সাজা স্থগিত করে স্থায়ী
মুক্তির আবেদনও করা হয়েছে।
তবে খালেদা
জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না বলে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আর নির্বাহী আদেশে খালেদার সাময়িক মুক্তির মেয়াদ আবার ৬ মাস
বাড়ানো হতে পারে। সোমবার সচিবালয়ে নিজের দপ্তরে
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী
বলেন, আবেদন হাতে পেলেও এখনো ভালোভাবে পড়ে দেখার সুযোগ তার হয়নি। ফাইল পড়ে দেখে মঙ্গলবার
তিনি সিদ্ধান্ত জানাবেন। খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন
হবে না। তাকে বিদেশ থেকে ডাক্তার এনে চিকিৎসা করার অনুমতিও দিয়েছিলাম। ডাক্তার তাকে
চিকিৎসাও করেছিলেন, ডাক্তার তাকে সুস্থও করেছেন। খালেদা জিয়ার এবারের… মেয়াদ ছয় মাস হয়, নাকি আরও বেশি হয়, সেটা জানার জন্য আগামীকাল পর্যন্ত
অপেক্ষা করতে হবে।
গত ৬ মার্চ
পরিবারের পক্ষে খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম সাত্তার আবেদনের চিঠিটি স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দেন। রোববার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, আবেদনপত্রে ম্যাডামের স্থায়ী মুক্তি
ও বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। ম্যাডামের ছোটভাই (শামীম ইস্কাদার) অসুস্থ থাকায়
আমি চিঠিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দিয়েছি। আবেদনপত্রে শামীম ইস্কাদার বলেন,
বেগম জিয়ার জীবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষায় দরকার দেশের বাইরে চিকিৎসা।
আবেদন পত্রটি
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে। সোমবার সাংবাদিকরা এ বিষয়ে দৃষ্টি
আকর্ষণ করলে আইনমন্ত্রী বলেন, মেয়াদ বৃদ্ধি করার আইনি সুযোগ আছে, কিন্তু বিদেশে যাওয়ার
অনুমতি বা অন্য কিছু করার আইনি সুযোগ নাই।
আনিসুল হক বলেন,
বেগম খালেদা জিয়া কিন্তু মুক্ত। তাকে দুটো শর্ত দেওয়া হয়েছে। একটা হচ্ছে তিনি বিদেশ
যেতে পারবেন না, দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে তিনি ঢাকায় থেকে চিকিৎসা নেবেন। তাকে কিন্তু চলাফেরা
বা চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অনুমতি নিতে হয় না এবং তিনি অনুমতি নেনও না। সেই ক্ষেত্রে
খালেদা জিয়াকে আবার মুক্তির কথা বলাটা একটু ইরিলেভেন্ট।
কেন খালেদা
জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে না, সেই প্রশ্নে পুরোনো ব্যাখ্যা তুলে ধরে
মন্ত্রী বলেন, একটা জিনিস আমি বুঝতে পারছি না। বহুবার আমি আইনের ব্যাখ্যা দিয়েছি। ফৌজদারি
কার্যবিধির ৪০১ ধারার বাইরে গিয়ে আমাদের কিছু করার নেই। তারপর প্রতিবারই তারা প্রথম
যে চিঠি লিখেছিল সেই আকারেই আবেদন করছে।
সরকারপ্রধান
চাইলে খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে কিনা জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন,
সরকারপ্রধান মানে হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি যেহেতু এটা নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন,
এখন এটা পরিবর্তন করার আইনি কোনো বিধান নেই। সরকার প্রধানকে আইনের ভেতরে থেকে মানবিক
বিবেচনা করতে হবে। আইনের বাইরে গিয়ে তিনি মানবিক কারণ দেখাতে পারবেন না। প্রথম বার
থেকেই মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে জামিন (নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি) দেওয়া হচ্ছে।
এখন সেই মেয়াদ বারবার রিনিউ হচ্ছে, সেটা কিন্তু মানবিক কারণেই হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮
সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায়
খালেদা জিয়াকে সাজা দেন আদালত। সেই থেকে প্রায় দুই বছর জেলে ছিলেন তিনি। পরে মহামারী
করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা
জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে দুটি শর্তে সরকারের নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
প্রথমটি হলো,
তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। দ্বিতীয় শর্তটি হলো, তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।
তখন করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে তার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ৬ মাসের জন্য
মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর থেকে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাস অন্তর অন্তর তার
মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।
সর্বশেষ গত
বছরের ১২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৪ মার্চ।