দিনাজপুর জয়া বর্মণ (৩৫) নামের এক নারী হোটেল শ্রমিককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় পরকীয়া প্রেমিক আসামী তরিকুল ইসলাম চান্দুকে (২৮) গ্রেফতার পুলিশ করেছে।
রোববার বিকেল ৪টায় দিনাজপুর পুলিশ সুপার হলরুমে সাংবাদিকদের এই বিষয়ে প্রেসব্রিফিং করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুল্লাহ আল-মামুন।
তিনি জানান, রোববার সকালে দিনাজপুর খানসামা উপজেলার পাকেরহাট বাজারের মাহিন সুইট নামে এক হোটেল থেকে ওই আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
নিহত হোটেল শ্রমিক জয়া বর্মন সুন্দরী ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বানডাঙ্গা গ্রামের সুফল রায়ের স্ত্রী। তারা দিনাজপুর শহরের ফকিরপাড়া মহল্লায় আব্দুস সামাদের বাসায় ভাড়া থাকেন। অভিযুক্ত তরিকুল ইসলাম চান্দু দিনাজপুর সদর উপজেলার মুরাদপুর দামপুকুর গ্রামের আসরাফ আলীর পুত্র। তিনি পেশায় একজন হোটেল শ্রমিক।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় শহরের মির্জাপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় কালুর মোড়ে বিসমিল্লাহ হোটেলের সামনে জয়া বর্মন সুন্দরীকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায় তরিকুল।
গ্রেফতারের পর তরিকুল পুলিশকে জানান, ৫ বছর আগে তার স্ত্রী মারা যান। এরপর থেকে তিনি বাস টার্মিনালে হোটেল সাউদিয়ায় বয় হিসেবে কাজ করেন। সেখানেই কাজ করতেন জয়া বর্মন সুন্দরী। একই সঙ্গে কাজ করার সুবাদে দুজনের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে। তিনি যা আয় করতেন তার বেশিরভাগ অংশই জয়া বর্মন সুন্দরীকে দিতেন। স্বামীর অনুপস্থিতিতে জয়া বর্মন সুন্দরীর বাসাতে রাত যাপন করতেন। তবে ৬ মাস ধরে তরিকুল স্বামীকে ছেড়ে তাকে বিয়ে করার জন্য জয়াকে চাপ দেন। কিন্তু সম্পর্ক চালিয়ে যেতে রাজি হলে বিয়ে করতে রাজি হননি জয়া। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।
তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, পরিকল্পিতভাবে ঘটনার ১০ দিন আগে তরিকুল তার মোবাইল বন্ধ করে দেন। ঘটনার দিন তিনি শহরের মহারাজার মোড় কামারের দোকান থেকে ২০০ টাকায় একটি দা কেনেন। সন্ধ্যায় সেই দা দিয়ে কালুর মোড়ে বিসমিল্লাহ হোটেলের সামনে জয়াকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যান। পরে গুরুত্বর আহত অবস্থায় জয়াকে উদ্ধার করে দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানের অপারেশন থিয়েটারে তিনি মারা যান। এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে জয়ার স্বামী সুফল রায় বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। উক্ত মামলায় তরিকুল ইসলাম চান্দুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এই ঘটনায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে হলরুমে ব্রিফিং এ উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল শেখ জিন্নাহ আল মামুন, কোতয়ালী থানার অফিসার্স ইনচার্জ ফরিদ হোসেন।
দিনাজপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আসামি মো. তরিকুল ইসলাম চান্দু হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। অবৈধ সম্পর্কের জেরেই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। আসামিকে কোর্টে চালান দিয়ে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে বলে প্রকাশ করেন।