সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার মীর্জার মাঠে অবস্থিত ২৫৭ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক নিদর্শন ‘আওকরা’ মসজিদ। স্থানীয়রা ২০১৮ সালের শুরুর দিকে নিজ উদ্যোগে ঝোপ-জঙ্গল সাফ করে মসজিদটি নামাজ আদায় করার উপযোগী করলেও দেওয়ালে বড় বড় ফাটল দেখা যাওয়ায় এতে ঝুঁকিতে মুসল্লি ও দর্শনার্থীরা।
এটি খানসামা উপজেলার ৩নং আঙ্গারপাড়া ইউনিয়ন পাকেরহাট গ্রামের সীমান্তবর্তী মীর্জার মাঠ নামক স্থানে অবস্থিত। উপজেলা পরিসংখ্যানের তথ্যে পাওয়া গেছে, আওকরা মসজিদটি প্রায় ২৫৭ বছর আগে বাংলা ১১৭২ সালে মীর্জা লাল বেগ নির্মাণ করেন। চিকন ইটে নির্মিত দেয়ালে নকশা করা মসজিদটি উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বেলান নদীর পূর্ব ধারে মীর্জার মাঠ নামক স্থানে অবস্থিত। তৎকালীন মীর্জা সাহেব মসজিদটি প্রতিষ্ঠার সময় কী নাম রেখেছেন তা সঠিক ভাবে কেউ বলতে পারেন না। অথচ আওকরা মসজিদটি ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত হলেও এখনও এটি সংস্কারে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি ফলে এটি এখন ধ্বংস প্রায় অবস্থায় ।
জানা যায়, কোনো মানুষ মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মসজিদের মধ্যবর্তী অংশে দাঁড়িয়ে কথা বললে একসময় জোরে প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হতো। তাই শুনে তারা ভাবতো মসজিদটি তাদের কথার উত্তর দিচ্ছে। এ থেকে মসজিদের নাম হয়ে যায় ‘আওকরা’ মসজিদ অর্থাৎ কথা বলা মসজিদ। এখনো মানুষ পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শব্দ করে কথা বলে প্রতিধ্বনি শোনার আশায়। কিন্তু মসজিদের দেয়াল ফেটে নষ্ট হওয়ায় আগের মতো আর আওয়াজ হয় না।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মফিজ উদ্দিনসহ ঐ এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, একসময় মসজিদটির আশপাশে মুসলিম জনবসতি ছিল। যে কারণে এখানে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল এবং ব্রিটিশ সরকারের আমলে অথবা অন্য কোনো কারণে তারা মসজিটির আশপাশ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। ফলে এটি অযত্ন-অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায় দীর্ঘকাল পড়ে থাকে। পরে শেরু পাড়া এলাকার যুবসমাজ মসজিদটি পরিষ্কার করে নামাজ পড়ার উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলে।
আরও পড়ুন >>মানবতাবিরোধী অপরাধ: ২০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার
তারা আরো জানান, মীর্জা লাল বেগের ওই মসজিদকে ঘিরে মীর্জার মাঠে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠত হয়। যা পরে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এছাড়াও একই স্থানে মীর্জার মাঠ আওকরা মসজিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে আরও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়।
মসজিদ কমিটির সদস্য মোকছেদুল ইসলাম জানান, আমরা ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে নামাজ পড়ার উপযোগী করে তুলেছি কিন্তু দেয়ালের ফাটলের কারণে আতঙ্কে থাকতে হয় তাই প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ যদি পদক্ষেপ নিয়ে এই মসজিদটির সংস্কার করে তাহলে এটি হতে পারে দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
মসজিদ কমিটির অন্যতম সদস্য মজনু আলম জানান, এই ঐতিহাসিক আওকরা মসজিদ যদি সংস্কার করা না যায় তাহলে এই প্রাচীনতম নির্দশন ধ্বংস হয়ে যাবে। নতুন প্রজন্ম এই ঐতিহাসিক নির্দশনের কথা বলতেই পারবে না।
মসজিদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কান্তনগর প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের সহকারী কাস্টেডিয়ান হাফিজুর রহমান জানান, আওকরা মসজিদটি প্রত্নতত্ত্বের অধীনে রয়েছে। আওকরা মসজিদটি সংস্কার করা হবে। তবে আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। এ কারণে একটু সময় প্রয়োজন।