
শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি:
শেরপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। চারিদিকে আমন ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণ। ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-শ্রমিকরা। কারণ নতুন ফসলে হেমন্তের নবান্ন উৎসবে মেতে উঠবেন তারা। কৃষকরা বলছেন, বিগত বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই মাঠের ধান গোলায় তুলতে পারছেন।
নবান্ন উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি। নতুন ধান কাটা আর সেই ধানের প্রথম অন্ন খাওয়াকে কেন্দ্র করে পালিত হয় এ উৎসব। নতুন চালের তৈরি পায়েস-পোলাও, পিঠা-পুলিসহ রকমারি খাদ্যসামগ্রী পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হয়। পাশাপাশি পালন করা হয় সামাজিকভাবে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী নানা আচার অনুষ্ঠান।
শেরপুর উপজেলার বিশালপুর গ্রামের গৃহবধূ সাবিনা বেগম বলেন, নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে ঘরবাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়। নতুন ধানের চাল ও আটা দিয়ে হরেক রকম পিঠা তৈরি করা হয়। সঙ্গে গুড় ও চিনি থাকে। নতুন চালের এক অন্য রকম সুগন্ধ থাকে। প্রতিবেশীসহ আত্মীয়স্বজন ও মেয়ে-জামাইকে দাওয়াত করে খাওয়ানো হয়। সে সময় গ্রামের বাড়ি বাড়ি যেন উৎসব বিরাজ করে।
উপজেলার কাফুড়া গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, নতুন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় খুশি। কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই মাঠের ফসল ঘরে উঠাতে পেরেছি। প্রতি বিঘায় প্রায় ১৮-২০ মণ ফলন হয়েছে। সামান্য রোগ-বালাই হলেও তেমন সমস্যা হয়নি। তবে সার, কীটনাশক, শ্রমিকের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেশি পড়েছে। এ নতুন ধান দিয়ে এবার নবান্ন উৎসব পালন করবো।
শেরপুর শালফা টেকনিক্যাল বিএম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক নুরুল ইসলাম বলেন, বাঙালি সংস্কৃতির একটা অন্যতম উৎসব নবান্ন। অগ্রহায়ণ মাসে নতুন ধান গোলায় উঠতো। সেই ধানের চালের খির-পায়েস তৈরি করে মানুষ উৎসব পালন করতো। এখন আর তেমন পালন করতে দেখা যায় না। আগে বছরে মাত্র একটি ফসল হতো। অভাব থাকায় মানুষকে সেই ফসল ঘরে উঠানোর জন্য দীর্ঘসময় প্রতীক্ষায় থাকতে হতো। এখন বছরে তিনটি ফসল হয়। এ কারণে মানুষের মধ্যে নবান্নের আগের সেই রূপ, চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য নেই। তবে গ্রামের মানুষ এখনো সেই দিনটিকে যথাযথ মূল্যায়ন করে। তাদের কাছে নবান্ন উৎসবের দিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।