দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষ হয়েছে বুধবার (২১ নভেম্বর)। এবার আসন প্রতি মনোনয়ন প্রত্যাশী ১১ জন। মনোনয়ন প্রত্যাশীর এ তালিকায় আছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অন্তত এক ডজন কাউন্সিলর। তাদের মধ্যে কেউ কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পদত্যাগের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
দলীয় সমর্থনপ্রত্যাশী কাউন্সিলরদের দাবি, তারা দলীয় সমর্থন নিয়ে একাধিকবার কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছেন। প্রমাণ করেছেন তারা যোগ্য। এখন জনসেবার পরিধি আরও বাড়াতে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনে আগ্রহী। দল সমর্থন দিলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন। অন্যথায় দল থেকে যাকে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে, তাকে সমর্থন দেবেন তারা।
গত শনিবার (১৮ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) বিকেল ৪টা পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে সংগঠনটি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি সূত্র জানায়, এখন দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা শুরু হবে। এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর মনোনয়ন বোর্ডের সভায়ই চূড়ান্ত হবে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হচ্ছেন কারা।
আরও পড়ুন>> নয় আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী
দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২০টি ঢাকায়। এর মধ্যে খিলগাঁও, সবুজবাগ ও মুগদা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন ঢাকা-৯। এ আসনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ডিএসসিসির ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য কাউন্সিলর আনিসুর রহমান। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে জানতে চাইলে আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমি ডিএসসিসির ২ নম্বর ওয়ার্ডে দলের সমর্থন নিয়ে পর পর দুবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। জনগণের জন্য রাস্তা-ঘাট, মাঠ, পার্ক করেছি। এসব কাজের জন্য জনগণের ভালোবাসা পেয়েছি। এখন জাতীয় পর্যায়ে জনসেবা করতে চাই। দলের সমর্থন পেলে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করবো।’
২০২০ সালে ঢাকা-১০ আসনে উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন ধানমন্ডি থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম বাবলা। কিন্তু দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে এ আসনে সংসদ সদস্য হয়েছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। এবার নির্বাচনে এ আসন থেকে দলের প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন তিনি।
ধানমন্ডি-নিউমার্কেট-কলাবাগান-হাজারীবাগ থানার সমন্বয়ে ঢাকা-১০ আসন গঠিত। রফিকুল ইসলাম বাবলা বলেন, ‘এ আসনে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতি করছি। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছি। আশাকরি প্রধানমন্ত্রী আমাকে এ আসনে সমর্থন দেবেন।’
পুরান ঢাকার লালবাগ, চকবাজার, কোতোয়ালি, বংশাল থানা এলাকা নিয়ে ঢাকা-৭ আসন গঠিত। এ আসনে আলোচিত সংসদ সদস্য প্রার্থী হাসিবুর রহমান মানিক। তিনি ডিএসসিসির ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এবার নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
আরও পড়ুন>> চারদিনে আওয়ামী লীগের ৩৩৬২ মনোনয়ন ফরম বিক্রি
এর আগে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন। তখন হাসিবুরের কপাল খোলেনি। তবে তাকে নিয়ে লেখা ‘দিস ইলেকশন ইজ ভেরি ইমপরট্যান্ট ইলেকশন, সো গাইস, বি কেয়ারফুল'—একটি গানের চরণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল।
জানতে চাইলে হাসিবুর রহমান মানিক বলেন, ‘ঢাকা-৭ আসনের জনগণ আমাকে সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চায়। তাদের দোয়া-সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনে জমা দিয়েছি। এখন সভানেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন, তা হলে ঢাকা-৭ আসনে নৌকার বিজয় এনে দেবো।
ঢাকা-৭ আসনে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর বিন আব্দাল আজিজও প্রার্থী হয়েছেন। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য। তিনিও দলের সমর্থন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে শাহাবাগ, পল্টন, রমনা, শাহজাহানপুর থানা এলাকার সমন্বয়ে গঠিত ঢাকা-৮ আসনে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন ডিএসসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন। তিনি দলের ওপর মহলের নির্দেশেই এ আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন বলে দাবি করেন। এছাড়া এ আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন ডিএসসিসির সংরক্ষিত ৫ নম্বর আসনের (ওর্য়াড নম্বর- ১৩, ১৯, ২০) রোকসানা ইসলাম চামেলী।
যদিও তাদের দুজনের আগে গত রোববার ঢাকা-৬ ও ঢাকা-৮ আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
আরও পড়ুন>> আ.লীগের মনোনয়ন কিনলেন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, মেয়ে তানিয়া
ঢাকা-৪ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধি নেই। এ আসনে পরপর দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। এবার এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান ডিএসসিসির ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিক। এছাড়া একই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী হাবিবুর রহমান।
এছাড়া ঢাকা-১৪ আসনে প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেওয়ান আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘দলের সমর্থন নিয়ে এ ওয়ার্ডে দুবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবো বলে আশা করি।’
এর বাইরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির আরও অনেক কাউন্সিলর মনোনয়পত্র কিনেছেন এবং জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের
তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। ভোট অনুষ্ঠিত হবে ৭
জানুয়ারি। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র
জমার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর।