কর্ণফুলী নদীর
তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলো। এবার দুয়ার খুলছে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ চার
হাজার কোটি টাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও দেড় হাজার কোটি টাকার পতেঙ্গা কন্টেইনার
টার্মিনাল।
দেশের ইতিহাসে
প্রথমবারের মতো সৌদি প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে পরিচালনা করবে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল।
আগামী ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পটির উদ্বোধন
করবেন।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম
মহানগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এই উড়াল সড়ক শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের
যাত্রাপথকে সুগম করবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
(চউক)।
দেশের প্রধান
সমুদ্রবন্দর নিয়ে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামকে নিয়ে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন
কর্মকান্ডে পুরো দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক ফলপ্রসূ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। চট্টগ্রামকে
কার্যকর একটি বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ
করেছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন
কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, ১৮টি র্যাম্পের কাজ আগামী
বছরের ২৪ জুনের মধ্যে শেষ করবো। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে দ্রুত বিমান বন্দর
থেকে আসতে পারবেন। পতেঙ্গা টানেলের মুখ থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত গাড়ি চলাচলের জন্য প্রস্তুত
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত একটু সময় লাগবে। বাকি
সব কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।
৪ হাজার ২৯৮
কোটি টাকায় লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড
এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের নভেম্বরে। তবে একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল
২০১৭ সালের ১১ জুলাই। কিন্তু বন্দর অংশে বন্দর কর্তৃপক্ষের আপত্তি ও আগ্রাবাদ বক্স
কালভার্ট এবং টাইগারপাসে রেলওয়ের মালিকানাধীন ভূমি জটিলতা ছিল, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল
নগরীর টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত পাহাড়ের সৌন্দর্য রক্ষার আন্দোলন। এই অংশে
ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হলে পাহাড়ের সৌন্দর্য বিনষ্ট হবে।
পরবর্তীতে ৮
জুন ২০২১ সালে সিটি কর্পোরেশন, মেট্রোপলিটন পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের সাথে সমন্বয়
করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)
নতুন এই নকশা নির্ধারণ করে। চার লেনের পরিবর্তে দুই লেনে নামিয়ে আনা হয়। তবে তারপরও
একটি অংশ কিছু পাহাড় কাটা হয়েছে। এজন্য পাহাড়কে আবার ট্রিটমেন্টও করে দেয়া হয়েছে উড়াল
সড়কটি মাধ্যমে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে মাত্র ২০ মিনিট।
ফলে নগরীর ব্যস্ততম সড়কে কমবে যানজট। বর্তমানে দেওয়ানহাট থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত
চলছে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের শেষ সময়ের কাজ।
তবে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ১৪টি র্যাম্প নির্মাণ করা হবে এক্সপ্রেসওয়ে
চালুর পর।
২০১৭ সালে একনেকে
‘চট্টগ্রাম
শহরের লালখান বাজার হতে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ নামে প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। ২০১৮ সালে এর কাজ শুরু হয়। তবে ২০১৯ সালের
২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের
ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। ২০২২ সালে নকশা ‘সংশোধন’ করা হলে আরও এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
বাস্তবায়নের
মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে টানেল উদ্বোধনের
পর ১১ নভেম্বর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ। যাতায়াত ব্যবস্থায় দুই
মেগা প্রকল্পের উদ্বোধনের পর এবার চট্টগ্রাম শহরের ভেতরে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড
এক্সপ্রেসওয়ে (লালখান বাজার থেকে টানেল পর্যন্ত) প্রকল্পের উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা।
এছাড়া গণপূর্ত
মন্ত্রণালয়ের ১২টি প্রকল্প আগামী ১৪ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন।
এতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ আরও দুটি প্রকল্প (বাকলিয়া
এক্সেস রোড ও ডিটি-বায়েজীদ সংযোগ সড়ক), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কিছু প্রকল্প, গণপূর্ত
অধিদপ্তরের কয়েকটি প্রকল্প রয়েছে।
পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য সৌদি
প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষকে।
প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ করে কর্ণফুলি ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় গড়ে তোলা হয় টার্মিনালটি।
কিন্তু দেশি নাকি বিদেশি প্রতিষ্ঠান দিয়ে এ টার্মিনাল পরিচালনা করা হবে সেই জটিলতায়
আটকে ছিলো এর অপারেশনাল কার্যক্রম।
চট্টগ্রাম বন্দর
চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল বলেন, এটি পুরোপুরি চালু হবার পর বন্দরের সার্বিক সক্ষমতা অনেকগুণ বাড়বে। আগামী ১৪ নভেম্বর টার্মিনালটির উদ্বোধন হচ্ছে। পরে সৌদি প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ের সাথে বন্দরের
চুক্তি স্বাক্ষর হবে।
সম্প্রতি উদ্বোধন
হওয়া কর্ণফুলি নদীর তলদেশের বঙ্গবন্ধু টানেলের সুফল পেতে প্রয়োজন ছিলো দ্রুত এ এলিভেটেড
এক্সপ্রেস দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।
উল্লেখ্য, শাহ
আমানত সেতু থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেডের আওতায় চলে আসবে। শাহ আমানত সেতু থেকে বহদ্দারহাট
পর্যন্ত সড়ক ও জনপথ ছয় লেনের একটি রোড নির্মাণ করেছে। এতে সড়কে বিরতিহীনভাবে গাড়ি চলাচল
করতে পারে। বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার দিয়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে দিয়ে সরাসরি চলে যাওয়া
যাবে পতেঙ্গা সৈকত হয়ে টানেল দিয়ে নদীর ওপারে কিংবা ঢাকামুখী আউটার রিং রোডে যুক্ত
হওয়া যাবে।