আন্তঃনগর ট্রেনের
নিরাপত্তা দেবে পুলিশ। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) আর এ দায়িত্ব পালন করতে পারবে
না। ফলে ভাতাও পাবে না। এতে ক্ষুব্ধ রেলের নিজস্ব বাহিনীর সদস্যরা। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে,
আরএনবি ট্রেন পরিচালনায় সম্পৃক্ত জনবল তথা রানিং স্টাফ নয়। তাদের ভাতা পাওয়ার সুযোগ
নেই। তাই চলন্ত ট্রেনের দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে।
রেলওয়ের নিরাপত্তার
জন্য পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের নেতৃত্বে রেঞ্জ রয়েছে। কর্মপরিধি অনুযায়ী, স্টেশন
এলাকা ও রেললাইনের দুই পাশের ১০ ফুট করে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব রেলওয়ে পুলিশের।
অন্যান্য স্থাপনা ও সম্পদ পাহারায় থাকে আরএনবি। এ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে যাত্রী
হয়রানি, ট্রেনে বিনাটিকিটে যাত্রী তুলে নিজের পকেট ভারী করার অভিযোগ রয়েছে। আবার চলন্ত
ট্রেনের দায়িত্ব পালনের কারণে ভাতাও পেয়ে থাকেন।
বিনাটিকিটের
যাত্রী ও ভাতার খরচ কমাতে আরএনবিকে চলন্ত ট্রেনের দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে– রেলসূত্রের খবর। তবে আরএনবি সদস্যদের
দাবি, এতে তারা শুধু ভাতা হারাবেন না, যাত্রীরাও নিরাপত্তাহীনতায় পড়বেন। ছিনতাই, মাদক
পরিবহন, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, মলমপার্টির উৎপাত বাড়বে। বিনাটিকিটের যাত্রীদের কাছ থেকে
পাওয়া টাকার পুরোটা পকেটে ঢোকাতে কর্তৃপক্ষকে দিয়ে পুলিশ ও আউটসোর্সিংয়ের কর্মীরা আরএনবিকে
দায়িত্ব থেকে সরিয়েছে।
তবে রেলসূত্রের
ভাষ্য, আরএনবি সদস্যদের অস্ত্র না থাকায় ছিনতাই, মাদক পরিবহন, চোরাচালানের মতো অপরাধ
দমনে সক্ষম নয়। বিনাটিকিটের যাত্রী তুলে যে ‘উপরি আয়’ হয়, তা পুলিশ, রানিং স্টাফ এবং আরএনবির মধ্যে ভাগ হতো। দায়িত্ব থেকে
সরিয়ে নেওয়ায় এ ভাগ হারিয়েছে আরএনবি। পুলিশের কব্জায় যাবে তা। ভাতা ও ‘উপরি আয়’ হারিয়ে ক্ষুব্ধ আরএনবি।
আরও পড়ুন>> উচ্চবিত্ত পর্যায়ে দুর্নীতি বেশি হচ্ছে : পরিকল্পনামন্ত্রী
রেলওয়ের মহাপরিচালক
কামরুল আহসান বলেছেন, আরএনবি রানিং স্টাফ নয়। তাই আন্তঃনগর
ট্রেনের দায়িত্ব থেকে তাদের সরানো হয়েছে। অন্যান্য ট্রেনে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব
দিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ট্রেনের সামনের দিকে এবং পেছনে দুটি পৃথক গার্ড ব্রেক থাকে।
আরএনবি সদস্যরা তা পাহারা দিতেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে সামনের গার্ড ব্রেকটি তালাবদ্ধ রাখা
হবে।
ট্রেন চালানোর
সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত কর্মী তথা পরিচালক, লোকোমাস্টার (চালক), সহকারী লোকোমাস্টার,
সাব লোকোমাস্টাররা রানিং স্টাফ হিসেবে গণ্য হন। তারা দিনে ১০০ মাইলের বেশি ট্রেন পরিচালনা
করলে এক দিনের বেতনের সমপরিমাণ মাইলেজ ভাতা পান, যার ৭৫ শতাংশ পেনশনে যোগ হয়। পরে আদালতের
রায়ে ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক (টিটিই), অ্যাটেন্ড্যান্টসরা রানিং স্টাফের স্বীকৃতি
পেয়েছেন। খরচ কমাতে সরকার মাইলেজ ভাতার সুবিধা বাতিল করেছে। তবে রানিং স্টাফদের আন্দোলনে
তা পুনর্বহালের প্রক্রিয়া চলছে। আরএনবিও একই সুবিধা চাইছে। মাইলেজ না পেলেও ট্রেনে
দায়িত্বের জন্য মূল বেতনের অনুপাতে ভাতা পেতেন আরএনবি সদস্যরা।
গত ১ সেপ্টেম্বর
থেকে আন্তঃনগর ট্রেন থেকে আরএনবিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগে প্রতিটি ট্রেনে একজন হাবিলদারের
নেতৃত্বে দু-তিনজন করে আরএনবি সিপাহি থাকত। অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত
আলী বলেন, ‘বিভিন্ন সময় আরএনবি সদস্য বিষয়ে কথা উঠেছে। তারা কিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও
ঘটিয়েছে। তাই এই বাহিনীর সদস্যদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
তবে ঠিক কী
কারণে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা বোধগম্য নয় বলে দাবি করেছেন আরএনবির পূর্বাঞ্চলীয় চিফ
কমান্ডেন্ট মো. জহিরুল ইসলাম। বাহিনীতে দুই হাজার সদস্য থাকার কথা থাকলেও এখন আছে মাত্র
৮০০।
আরও পড়ুন>> দেশে নতুন জঙ্গি সংগঠন, করছিল হামলার পরিকল্পনা
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের
চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট কার্যালয়ের চাহিদায় ২০০৬ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনে
আরএনবি সদস্য মোতায়েন করা হয়। একজন লোকোমাস্টার ঢাকা-ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ রুটের
আন্তঃনগর হাওর এক্সপ্রেসের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ট্রেনটিতে প্রতি যাত্রায় অন্তত শপাঁচেক
বিনাটিকিটের যাত্রী থাকেন। পুলিশ, আরএনবি এবং রানিং স্টাফরা এসব যাত্রী তোলেন। যাত্রীপ্রতি
২০০ টাকা আদায় করলেও প্রতি যাত্রায় লাখ টাকা উপরি আয় হয়। পুলিশ, আরএনবি এবং রানিং স্টাফ
মিলিয়ে একটি ট্রেনে ২০ জনের বেশি থাকে না। ফলে জনপ্রতি দিনে আয় ৫ হাজার টাকা। খরচ কমাতে
অ্যাটেনড্যান্টস সরিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ঠিকাদারের মাধ্যমে অনবোর্ড সেবা দিতে
যেসব বেসরকারি কর্মী রাখা হয়েছে, তারাও ভাগ পান। ভাগ পান রেলের কর্মকর্তারাও। উপরি
আয়ের জন্যই আরএনবিসহ সবাই ট্রেনে দায়িত্ব পালন করতে চায়।