জেলা প্রতিনিধি:
শরীয়তপুর সদর উপজেলার পালং ইউনিয়নের পাটনীগাঁও এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। এলাকাবাসীর অভিযোগ বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও এই এলাকার রাস্তাটি হয়নি। রাস্তাঘাটের জন্য চরম দুঃখ কষ্টে দিনযাপন করছে এলাকাবাসীরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পাটনীগাঁও এলাকায় প্রায় ছয়শত পরিবারের বসবাস। অধিকাংশ এলাকার মানুষজন অর্ধশিক্ষিত গরীব কৃষক। কিন্তু ছয়শত পরিবারের চলাচলের জন্য বৃক্ষতলা থেকে তেলিবাড়ি পর্যন্ত মাত্র ১.১৭ কিলোমিটার একটি গ্রামীণ রাস্তা। রাস্তাটির নেই কোনো শাখা রাস্তা। গ্রামীণ রাস্তাটি ইটের সোলিং দিয়ে তৈরী হলেও বন্যা, ভারী বর্ষণ ইত্যাদি কারণে বর্তমানে করুণ দশা রাস্তাটির। এ রাস্তা দিয়ে তিনটি গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ধামসি পাটনীগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা রাস্তা ভাঙা হওয়ার কারণে পড়ে গিয়ে আহত হয় বলে অধিকাংশ সময় ঝড়ে পড়ে। কষ্ট করে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়লেও গ্রামে কোনো উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় ষষ্ঠ শ্রেণীতে শহরে পড়তে যেতে চায় না ভাঙা রাস্তাটি পায়ে হেটে। যার কারণে পাটুনিগাঁওর শিক্ষার হার ক্রমাগত হ্রাসের দিকে, যা উদ্বেগ জনক। তাছাড়া গ্রামটিতে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও তা অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে বিধায় প্যাগনেন্টসহ ইমার্জেন্সেী রোগীরা হাসপাতালে যেতে পারে না, ফলে ঘটে দুর্ঘটনা।
পাটনীগাঁও গ্রামের জয় মন্ডল নামে এক যুবক বলেন, ভাই দুঃখের কথা কী বলব, ছোটবেলায় মাত্র অষ্টম পর্যন্ত পড়েছি খুব কষ্টে তারপর আর স্কুলে যাওয়া হয়নি রাস্তাটির কারণে। বর্তমানেও সেই একই চিত্র যখন দেখি তখন খুব কষ্ট হয় গ্রামের ছেলেপিলেদের জন্য। কিছুদিন আগে এক বৌদি মধ্যরাতের দিকে প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন কিন্তু রাস্তায় গাড়ি চলাচলের অবস্থা না থাকায় তাকে আমি পাজা কোলে করে বৃক্ষতলা পর্যন্ত নেই, গ্রামের মানুষ অর্ধ শিক্ষিত মুরুখ্খ হওয়ায় এই বিষয়টি নিয়েও তাড়া টিটকারি করতে আমাকে ছাড়েনি। এটাকে কেমন সংকট বলে, বলুন দেখি?
উত্তম কুমার নামে একজন বলেন, রাস্তাটির কারণে আমাদের অঞ্চলের বিভিন্ন রকম সমস্যা হচ্ছে। গ্রামের বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না, গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষক হওয়ায় তারা রাস্তাটির কারণে ধানসহ ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না, ফরিয়ারা এসে প্রতিমণে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কম দিয়ে ফসল নিয়ে যায়। এলাকায় কোনো অঘটন ঘটলে থানা পুলিশ আসতে পারে না। এলাকাটির অধিকাংশ পরিবার হিন্দু হওয়ায় এখানে প্রতিবছর নাম কীর্তন হয় কিন্তু দূরের কোনো মেহমান আসতে পারে না।
মধুসূদন মন্ডল নামে এক ষাটোর্ধ্ব মুরুব্বি বলেন, আমি বুড়ো হয়ে গেছি, গ্রামের রাস্তাটি এখনও ঠিক হলো না, আধুনিক যুগে কি আমরা অন্ধকারে পড়ে থাকব? রাস্তাটির কারণে আমরা ছেলে-মেয়ে বিয়ে দিতেও বাধা পাচ্ছি। শ্যাখের বেটির কাছে আমার আবেদন তিনি যেন রাস্তাটি করে দিয়ে আমাদের আলোর মুখ দেখান।
রাস্তাটির বিষয়ে পালং ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বার শাহিনুর ইসলাম শাহিন বলেন, রাস্তার কাজটি এলজিডিতে আছে, করোনার কারণে টেন্ডার হচ্ছে না।
এবিষয়ে পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন দেওয়ান বলেন, রাস্তাটি এর আগে রিপেয়ারিং এর টেন্ডার হয়েছিল , তারা কীভাবে কাজ করেছে তা আমি জানি না, আমি কাগজপত্র রেডি করে পাঠালেও কী কারণে যে টেন্ডার হলো না তা বুঝতে পারি নাই, তবে আমি আবার কাগজপত্র রেডি করেছি নতুন করে পাঠানোর জন্য।
রাস্তাটির বিষয়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলা প্রকৌশলী কে এম রেজাউল করীম বলেন, ভিলেজ রাস্তা রিপেয়ারিং এর অন্তর্ভূক্ত নয় রাস্তাটি, ভিলেজ রিপেয়ারিং এর অন্তর্ভূন্ত না হওয়ায় রাস্তাটি করা সম্ভব হচ্ছে না আমাদের পক্ষে।
কিন্তু কোন উপায়ে রাস্তাটি মেরামত হবে তা জানে না পাটনীগাঁওবাসী, তারা চায় রাস্তাটি হোক, গ্রামে আলো আসুক।