অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকছে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে যাওয়ায় আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়া, জ্বালানি সংকটসহ নানা কারণে ভুগতে হচ্ছে দেশটির মানুষকে। এরই মধ্যে ঋণখেলাপিও হয়েছে দেশটি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণ চেয়েছিল কলম্বো। শ্রীলঙ্কাকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে আইএমএফের সে ঋণ দেরিতে হলেও আসছে।
তবে এতেই স্বস্তি মিলবে না বলে সতর্ক করেছেন দেশটির প্রসিডেন্ট রনীল বিক্রমাসিংহে। তিনি বলেছেন, আইএমএফের ঋণ পেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে না। এটা কেবল দীর্ঘ, আরও কঠিন এক যাত্রার সূচনা মাত্র। আমাদের যত্নের সঙ্গে, আরও সাহস নিয়ে এই পথ পাড়ি দিতে হবে। এই যাত্রার একটাই উদ্দেশ্য- অর্থনৈতিক পুনর্গঠন।
চীন হলো শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতা দেশ। বেইজিং শ্রীলঙ্কার ঋণের শর্ত শিথিল করার আশ্বাস দেয়ার পর গত সোমবার আইএমএফের ঋণটি অনুমোদন পায়। পার্লামেন্টে দেয়া এক বক্তব্যে রনীল বিক্রমাসিংহে আইএমএফের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিকে দেশ পুনরুদ্ধারে মাইলফলক বলে অভিহিত করেছেন। তবে তিনি আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, এই পুনরুদ্ধার ঋণ আরও কঠিন কাঠামোগত সংস্কারের প্রথম পদক্ষেপ মাত্র।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে যাওয়ায় গত বছরের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা ঋণখেলাপি হয়। সে সময় তাদের বৈদেশিক ঋণ ছিল ৪ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার। একে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে যাওয়া, পাশাপাশি ঋণখেলাপি হওয়ায় শ্রীলঙ্কার আমদানি-রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এতে নিত্যপণ্যের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয় দেশটিতে। তারপর থেকে ২ কোটি ২০ লাখ জনগোষ্ঠীর দেশটিতে খাদ্য ও জ্বালানি সংকট চলছে এবং তা দিনে দিনে প্রকট হচ্ছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি লাগামহীন হয়ে উঠেছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
বিক্রমাসিংহে কর বাড়িয়ে এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ভর্তুকি কমিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছেন। বুধবার তিনি জানিয়েছেন, আইএমএফের শর্ত পূরণে আরও করারোপ করতে হবে। এতে বিদেশি ঋণের ওপর শ্রীলঙ্কার নির্ভরশীলতা অর্ধেকে কমবে। গত বছর শ্রীলঙ্কার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৯ শতাংশ ছিল বিদেশি ঋণ। আইএমএফ শ্রীলঙ্কাকে দুর্নীতি দমনে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন এবং শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনসসহ লোকসানি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রি করে দেয়ার শর্ত দিয়েছে।
বিক্রমাসিংহে ঘোষণা দিয়েছেন, সরকারি কোম্পানিগুলোয় বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকার পদক্ষেপ নেবে। তবে ট্রেড ইউনিয়নগুলো সরকারের এসব কঠোর পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে। গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য ও পরিবহন খাতের শ্রমিকদের অবরোধে এই দুই খাত প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। ট্রেড ইউনিয়নগুলো আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে।