সাতক্ষীরা থেকে দিলীপ কুমার দেব: সাতক্ষীরার চাঞ্চল্যকর পূর্ণিমা দাস ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি পার্থ মন্ডল(২১) কে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় আটক করেছে পুলিশ। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী সীমান্ত থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়াকালে তাকে আটক করা হয়। এবিষয় রবিবার বেলা ১২ টায় সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কার্যলয়ে প্রেস ব্রিফিং করেছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তফিজুর রহমান।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৪ তারিখ সকাল অনুমান ৬ টার সময় সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার টিকেট গ্রামের তারক বাবুর পুরাতন পরিত্যক্ত বাড়িতে স্থানীয়রা পূর্ণিমা দাসের মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশের সংবাদ দেয়।
তাৎক্ষণিকভাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ ) সজীব খান এর নেতৃত্বে ও জেলা গেয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইয়াছিন আলম চৌধুরী-এর সমন্বয়ে একটি চৌকস টিম মামলার মূল রহস্য উদঘাটন শুরু করে এজাহার নামীয় একমাত্র আসামী দেবহাটার টিকেট গ্রামের শিবু মন্ডলের ছেলে পার্থ মন্ডল (২১)কে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে বৈকারী সীমান্ত থেকে আটক হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামী পার্থ মন্ডল স্বীকারোক্তিকালে জানায়, গাভা একেএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা কালে ভিকটিম পূর্ণিমা দাস ও আসামী পার্থ মন্ডল এর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিন বছর ধরে প্রেম ছিল।
বর্তমানে ভিকটিম পূর্ণিমা দাস দশম শ্রেণির ছাত্রী এবং আসামী পার্থ মন্ডল এসএসসি পাশ করে খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ প্যারামেডিক্যালে ২য় সেমিস্টারে অধ্যায়নরত।
গত ৪ মাস পূর্বে তাদের প্রেমের সম্পর্ক উভয় পরিবারের সাথে জানাজানি হয়ে গেলে উভয় পরিবার তাদের প্রেমের সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে আসামী পার্থ মন্ডল বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে যায়। আসামী অসুস্থ থাকাকালীন তার প্রেমিকা পূর্ণিমা দাস আসামীর কোন খোঁজ খবর না নিয়ে তাকে এড়িয়ে চলে। পরবর্তীতে এলাকায় এবং এলাকার বাহিরে একাধিক ছেলের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়ায়। এধরনের সংবাদ আসামীর কানে আসলে আসামী পার্থ মন্ডল ভিকটিম পূর্ণিমা দাসের প্রতি ক্ষিপ্ত হয় এবং মনে মনে পরিকল্পনা করে সে পূর্ণিমা দাসকে না পেলে অন্য কাউকে তাকে পেতে দেবে না। সুযোগ বুঝে আসামী ভিকটিম পূর্ণিমা দাসকে হত্যা করবে। হত্যা সংঘটনের এক থেকে দেড় মাস পূর্ব হতে মোবাইল ফোনের কথোপকথনের মাধ্যমে তাদের মধ্যে আবার সখ্যতা তৈরী হয়।
পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ২৪ তারিখ সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার সময় দেবহাটা উপজেলার টিকেট গ্রামের তারক বাবুর পুরাতন পরিত্যক্ত বাড়িতে ভিকটিম পূর্ণিমা দাস আসামী পার্থ মন্ডল-এর সাথে দেখা করে। ঘটনাস্থলে কথাবার্তার এক পর্যায়ে আসামী তার কাছে থাকা কালো ক্যাবল তার দিয়ে ভিকটিমের গলায় পেঁচিয়ে দিয়ে শ্বাসরোধ করে অচেতন করে মাটিতে ফেলে দেয় এবং পরবর্তীতে ভিকটিমকে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে ভিকটিমের শরীরে বিভিন্ন স্থানে কামড় দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে সর্বশেষ তার হাত দিয়ে গলার টুটি চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
হত্যার পর দ্রুত সাতক্ষীরা শহরে সাইকেলযোগে পালিয়ে চলে এসে শহরের বড় বাজারস্থ প্রাণ সায়ের খালে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সীমসহ ফেলে দিয়ে রাতে পুরাতন সাতক্ষীরার এলাকায় বসুন্ধরা ম্যাচে অবস্থান করে।
পরেরদিন ভোরে সাতক্ষীরার বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করে বৈকারী সীমান্ত থেকে ভারতে যাওয়ার সয়ম আটক হয়। আসামীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাজে ব্যবহৃত ক্যাবল ও তার সাইকেল উদ্বার করা হয়। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের প্রচেষ্টা অব্যহত আছে।