আজঃ রবিবার ২৬ মার্চ ২০২৩
শিরোনাম

চুয়াডাঙ্গায় জমে উঠেছে শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী পূজা

প্রকাশিত:রবিবার ৩০ অক্টোবর ২০২২ | হালনাগাদ:রবিবার ৩০ অক্টোবর ২০২২ | ৯৪০জন দেখেছেন
দর্পণ নিউজ ডেস্ক


Image

চুয়াডাঙ্গা থেকে তানজীর ফয়সাল:

কার্তিক বা কত্যায়নী পূজা হিন্দু বাঙালিদের একটি জনপ্রিয় ধর্মীয় উৎসব। এ উৎসব কে ঘিরে চুয়াডাঙ্গায় এবারও পুরনো রীতি অনুসারে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কত্যায়নী পূজা উৎসব মুখর জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে দিয়ে কলাগাছি গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই পূর্জার সকল কাজ সম্পুর্ন শেষে আজ ৩০ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে আরম্ভ হবে এ পূর্জার আনুষ্ঠানিকতা। পাঁচ দিনের এ উৎসব আগামী ৩ নভেম্বর দশমী বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে।

রোববার (৩০ অক্টোবর) হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরনো রীতি অনুসারে অতীতের মতো প্রতিবছরের ন্যায় জেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের  কলাগাছি গ্রামের দু'টি মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী কাত্যায়নী পূজা বা কার্তিক পূজার এ উৎসটি। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা উৎসব। এ দূর্গা উৎসবের ঠিক একমাস পরই কলাগাছির হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে কার্তিকী বা কাত্যায়নী পূজাটি উদযাপন করে থাকেন। এ পূজাকে ঘিরে কলাগাছির হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

পূর্জা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, ইতিমধ্যেই পাবনা থেকে আগত প্রতিমা শিল্পী শ্রী জিতেন চন্দ্রর নিখুঁত হাতে খড়, বাঁশ, কাঁঠ, বেলে ও এঁটেল মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন স্বরস্বতী, কার্তিক, লক্ষী, সিংহ, গণেশ, অসুর, মহিষ, হাতি, পদ্মফুল প্রভৃতি প্রতিমাগুলো। প্রতিমা গুলোর শুকানোর পর প্রতিমা শিল্পীর নিখুঁত হাতের ছোঁয়া আর রং তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠেছেন সকল প্রতিমা গুলো। দেখে মনে হয় প্রতিমা শিল্পী তার হাতের জাদুকরী ছোঁয়াতে রূপ দান করেছেন আপন মনে। ফুটিয়ে তুলেছেন জীবন্ত রূপ। মূলতঃ হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব হলেও মন্দির প্রাঙ্গণে প্রতিমা গুলো দেখতে সনাতন ধর্মাবলম্বীর পাশাপাশি পথচারী সহ এলাকার শিশু-কিশোররাও ছুটে যাচ্ছেন দেখতে।

প্রতিমা শিল্পী জিতেন চন্দ্রর সাথে কথা হলে তিনি জানিয়েছেন, পাবনা জেলায় বাড়ি তার। বাপ দাদা সূত্রে পাওয়া এ পেশায় দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের বিভিন্ন জেলাতে কাজ করছেন তিনি। নিজের হাতে মায়ের কাজ করতে পারাতে আনান্দিত বলে ও জানান তিনি। এসময় তিনি আরো বলেন, মায়ের সর্বোচ্চ সুন্দর রূপ দান করতে নিজ মনের গভীর থেকে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে সর্বদাই চেষ্টা করেছি। আর এ প্রতিমা তৈরি করতে হলে আমাদের মতোন মৃৎশিল্পীদের মনের মাধুরি মিশিয়ে কাজ করাটাও জরুরি।

পূজা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে জানা গেছে, কার্তিক পূজা বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি জনপ্রিয় উৎসব। কার্তিক শিব ও দুর্গার সন্তান। তিনিই হিন্দুদের যুদ্ধ দেবতা। এ পূজাটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ অঞ্চলে জনপ্রিয় ও  প্রসিদ্ধ। কার্ত্তিক পূজার মাধ্যমে দম্পতিরা তাদের সন্তান-সন্ততি প্রার্থনা করে থাকেন।

তিনি আরো বলেন, গত দুইটি বছর মহামারি করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ স্বল্প পরিসরে এ পূজা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে ছিলো এখানে। গত দুইটি বছরের আনন্দ পুষিয়ে নিতে এ বছরের অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ আর বাহারি আলোকসজ্জায় পূজা প্রাঙ্গণের গেইট ও ডেকোরেশনে সাজানো হয়েছে। মায়ের মন্দির ও প্রবেশের দার পথেও রয়েছেন বিভিন্ন রঙের আলোকবাতি।

রোববার মহাষ্টমীর মধ্যে দিয়ে শুরু এ পূর্জা উৎসব আগামী ৩ নভেম্বর বিজয়ী দশমিক মধ্য দিয়ে শেষ হবে। কার্ত্তিক দেবতাদের সেনাপতি। তিনি অসীম শক্তিধর দেবতা। সেজন্য তাকে রক্ষাকর্তা হিসেবে আমার প্রতি বছরের মতো এবারও ইউনিয়নটির কলাগাছি গ্রামে এ পূজার আয়োজন করেছি।

এ বিষয়ে গড়াইটুপি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাঃ শফিকুর রহমান রাজুর সাথে মুঠোফোনে কথা বললে, তিনি আজকের দর্পণের প্রতিবেদক তানজীর ফয়সালকে জানান, ইউনিয়নের কলাগাছি গ্রামটি খুবই সীমিত মানুষ নিয়ে গঠিত একটি গ্রাম। পুরোনো রীতি অনুসারে এখানে প্রতি বছরের এ দিনটিকে বসবাসরত হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর শত বছরেরে পুরনো এ কার্তিক পূজার আয়োজনে করে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করে আসছেন।


আরও খবর