চট্টগ্রামের বিভিন্ন মার্কেট, বিপণী বিতান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে জেলা প্রশাসনের বিশেষ সভা; প্রত্যেক মার্কেটে কার্যকরী ফায়ার সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে হবে; সেফটি প্ল্যান না মানলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি 'বিশেষ সভায়' অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
সভায় চট্টগ্রাম চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি'র প্রতিনিধি হিসেবে অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, পরিচালক, চট্টগ্রাম চেম্বার; চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, জহুর হকার্স মার্কেট, রিয়াজুদ্দিন বাজার, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, টেরিবাজারসহ সকল মার্কেটের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বক্তারা জাননন, দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক অগ্নি দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। অগ্নি দুর্ঘটনার ফলে ব্যপাক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে ব্যবসায়ীবৃন্দ বিনিয়োগ শূন্য হয়েছে। বিগত সপ্তাহে রাজধানীর বঙ্গবাজারে মার্কেটে অগ্নি দুর্ঘটনায় বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি সম্পূর্ণ হয়েছে। একই বিষয় যেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন মার্কেটে অগ্নি দুর্ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে সতর্কতা ও কর্মপরিকল্পনা নেয়ার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম চেম্বার, বিভিন্ন ব্যবসায়িক (তামাকুন্ডি লেইন, নুপুর মার্কেট, জহুর শপিং মার্কেট, টেরী বাজারসহ অন্যান্য বাজার ব্যবসায়িক) প্রতিনিধি এবং সরকারী সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দের সাথে জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান মতবিনিময় করেন। এতে সকলেই স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদেরকে জাতীয় দুর্যোগসহ অগ্নি দুর্ঘটনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্লান পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বঙ্গ বাজারের মত পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ব্যবসায়ী সমিতি ও প্রতি ব্যবসায়ীকে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিষয়ে সভায় আলোচনা করা হয়। সভায় ১১টি নির্দেশনা দেয়া হয়:
১. প্রতিটি দোকানের ফায়ার লাইসেন্সসহ ফায়ারের অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র সংরক্ষণ করতে হবে। অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র হালনাগাদ (সচল) থাকতে হবে। দোকানদার/কর্মচারীগণকে ফায়ার সার্ভিস হতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ফায়ার হাইড্রেন ব্যবহার করতে হবে।
২. প্রতিটি মার্কেট সমিতিকে অগ্নি নির্বাপন সহ জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় নিজস্ব প্লান থাকতে হবে।
৩. মার্কেট সমিতি বিভিন্ন পয়েন্টে সিসি ক্যামরা লাগাবেন। সিসি ক্যামরা নজরদারীর জন্য মার্কেট সমিতি ৩-৪ জন কর্মচারী নিয়োগ দিবেন। উক্ত কর্মচারীগণ পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করবেন।
৪. ডিস ও ইন্টারনেটের লাইন আন্ডার গ্রাউন্ডে নেয়ার জন্য মার্কেট সমিতি কর্তৃক ডিস ও ইন্টারনেটের মালিকগণকে অনুরোধ করবেন।
৫. ব্যক্তিমালিকানাধীন মার্কেটসহ, সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ এর নিয়ন্ত্রাণাধীন মার্কেট সমূহ এর ব্যবসায়ী সমিত দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। যাতে মার্কেটে রিজার্ভ টাংকি, গাড়ী পাকিং এবং জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
৬. প্রতিটি বাজার ব্যবসায়ী সমিতি তাঁদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্ব-স্ব বাজারে ভোলান্টিয়ার নিয়োগ করবেন। তাঁরা মার্কেট/বাজার পরিদর্শন করে স্ব-স্ব বাজার ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিকে নিরাপত্তার তথ্য জানাবেন।
৭. ফুটপাত অবমুক্ত করার জন্য সিটি কর্পোরেশনকে পত্র প্রেরণ করা হবে।
৮. বৈদ্যুতিক লাইনের তার বর্তমান সময় উপযোগী করার জন্য বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে পত্র প্রেরণ করা হবে।
৯. জহুর হর্কাস মার্কেট দুইটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে হওয়ায় উক্ত দুইটি পাহাড় হতে বড় বড় ট্যাংক বসানোর জন্য মার্কেট প্রতিনিধি নিজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
১০. মহানগর এলাকার পুকুরগুলো বেদখল হয়ে যাচ্ছে। পুকুরগুলো অবৈধ দখলদার মুক্ত করে চারদিকে হাঁটার জন্য ওয়ার্ক ওয়ে নির্মাণ করার বিষয়ে নিম্নোক্ত প্রতিনিধি নিয়ে একটি টীম গঠন করা হবে।
i) সিএমপির উপর্যুক্ত প্রতিনিধি
ii) সিএমপির উপর্যুক্ত প্রতিনিধি
iii) মিডিয়ার উপর্যুক্ত প্রতিনিধি
১১. ফায়ারের বিষয়ে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিগণ/প্রতিটি ব্যবসায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে তাঁদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।