বসন্তের ছোয়া লেগেছে প্রকৃতিতে। শীতের হাত থেকে মুক্ত আকাশে পাখা মেলেছে পাখির দল। উড়ন্ত পাখিরা নির্ভয়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ফিরছে গাছের ডালে।
পাখ-পাখালির কথা উঠলেই চোখে ভেসে ওঠে সবুজে ঘেরা গ্রাম। শ্যামল-ছায়া আর সুনিবিড় সেই গ্রামজুড়ে থাকে পাখির কিচিরমিচির। তবে ইট-পাথরের শহরে কোলাহলের মাঝেও পাখিরা যে গলা ছেড়ে গাইতে পারে- তা চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হবে না।
ঠাকুরগাঁও শহরের ব্যস্ততম এলাকা বাসস্ট্যান্ড তেমনই ব্যতিক্রমী একটি জায়গা। যেখানে পাখিরা খুঁজে পেয়েছে তাদের নিরাপদ আবাস। তাইতো ছোট দুই-তিনটি গাছেই প্রতিদিন বিকেল হলেই জড়ো হয় হাজার হাজার চড়ুই। সেই সঙ্গে সন্ধ্যা নামতেই কিচিরমিচির ছন্দে তাল মিলিয়ে মেতে ওঠে তারা। আবার ভোরের আলো ফুটতেই উড়াল দেয় অজানায়।
পশ্চিমে সূর্য ঢলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুইপাখি আসে এই শহরের প্রাণকেন্দ্রে। আবার পূর্ব আকাশে ভোর হলেই বেরিয়ে পড়ে খাবারের সন্ধানে। এ যেন রোজকার রুটিন তাদের। শহরের যান্ত্রিকতা কিংবা কর্মব্যস্ত মানুষের ঘরে ফেরার শোরগোল ছাপিয়ে এই কলতান যেনো রঙ ছড়ায় পথের গল্পে, যা শুনে মুহূর্তের জন্য হলেও থমকে দাঁড়ায় পথিক। তাদের এমন ইতিউতি উড়াউড়ি আর খুঁনসুটি নাগরিক মন খুঁজে পায় গ্রামীন পরশ। হয়ে ওঠে ভীষণ রকম নস্টালজিক। যদিও গ্রামগঞ্জে দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে চড়ুই।
ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গোধূলি নামতেই ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসে গাছের দিকে পাখির দল। এরা গাছের এক ডাল থেকে আরেক ডালে ছোটাছুটি শুরু করে। কিচিরমিচির ডাকে মাতিয়ে তোলে পুরো শহর। সন্ধ্যা হলেই সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে যান পথচারীরা। যারা নতুন আসেন তারা দীর্ঘ সময় ধরে পাখির উড়াউড়ি দেখেন, মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেন, তোলেন ছবিও।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েক বছর ধরেই শহরের ব্যস্ততম বাসস্ট্যান্ড চত্বরকে ঘিরে বিদ্যুতের তারে ও গাছের ডালে চড়ুই পাখির এমন বাড়ি দেখা যাচ্ছে। বিকেল হলেই এরা দলে দলে আসতে থাকে। শুরু হয় কিচিরমিচির, ওড়াউড়ি। রাত বাড়লে বিদ্যুতের খুঁটিকে ঘিরে ঘন হয়ে আসে। একসময় চুপ হয়ে যায়। হঠাৎ করে পাখি বলে মনেও হবে না। মনে হতে পারে, গোলাকার কোনো কিছু তারে তারে ঝুলে আছে। শীত, ঝড়-বৃষ্টি সব সময়ই এরা কমবেশি আছে। কোনো কারণে মানুষ বিরক্ত করলে মাঝেমাঝে তারা একটু-আধটু এদিক-ওদিক স্থান বদল করে। কিছুদিন পর আবার পুরোনো স্থানে ফিরে আসে।
ওয়াজেদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিদিন পড়ন্ত বিকেলে পাখিরা এখানে এসে আশ্রয় নেয়। সন্ধ্যায় পুরো এলাকা পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে। নির্বিঘ্নে রাত কাটায় আর ভোর হলেই উড়ে যায় এরা। দিনের শেষে আবার নীড়ে ফেরে।
পরিবেশ কর্মী এস.এম. মনিরুজ্জামান বলেন, আগে বাসা-বাড়িতে প্রচুর চড়ুই পাখি দেখা যেত। এখন পাকা ঘর হওয়ায় আর তেমন দেখা যায় না। শহরের বাসস্ট্যান্ড মৌড়ে অনেকগুলো চড়ুই পাখি। এরা বিদ্যুতের খুঁটি ও তারে রাত কাটায়। যান্ত্রিক শহরে একসঙ্গে এত পাখির চঞ্চলতা ভালোই লাগে।
ঠাকুরগাঁও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, গাছপালা, পশুপাখি প্রকৃতির ভারসাম্য ও বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে। চড়ুই পাখিরা দলবদ্ধভাবে বসবাস করতে ভালোবাসে। তাই এরা একসঙ্গে থাকে। শহরের বাসস্ট্যান্ড মোড়ে একটি গাছে হাজারো চড়ুই পাখি বসবাস করছে, এটি দারুণ ভালো লাগার বিষয়। এদেরকে আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে।