ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় পৌর টোলের নামে বেপারোয়া চাঁদাবাজীতে অতিষ্ঠ যানবাহনের চালকরা। রেহাই পাচ্ছে না কেউ। উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি জানে বললেও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না তারা।
দীর্ঘ দিন ধরেই ভোলা সদর পৌরসভা বাদে অন্যসব পৌর এলাকায় প্রবেশ করলেই পৌর টোলের নামে চাঁদাবাজীর শিকার হচ্ছেন যানবাহন চালকরা। যানবাহনের প্রকার ভেদে আদায় করা হচ্ছে চাঁদা। অভিযোগ রয়েছে যার কাছ থেকে যা আদায় করতে পারে। এসব বিষয় নিয়ে ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ইতোমধ্যে।
এবিষয় বারবার মৌখিক অভিযোগ দেয়া হলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করে আসছেন স্থানীয় অটো রিক্সা, টেম্পো, মাহিন্দ্রা সিএনজি, সহ থ্রি হুইলার চালকরা। বাদ যাচ্ছে না ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাক কভার্ড ভ্যান পিকআপও।
অথচ গত বছরের ২৩ জুলাই এক আদেশে হয় যে, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের নামে টার্মিনালের বাইরে দেশের বিভিন্ন রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বাস, ট্রাকসহ যন্ত্রচালিত সব পরিবহন থেকে টোল (চাঁদা) আদায় বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মহামান্য হাইকোর্ট। এর পরেও বন্ধ হচ্ছে না চরফ্যাশন পৌরসভায় টোলের নামে চাঁদা আদায়।
আজ সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, চরফ্যাশন পৌরসভার অন্তত ১০টি স্থানে চলন্ত অবস্থায় গাড়ি থামিয়ে পৌর টোলের নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এসব বিষয় কোন প্রতিকার নেই। বোরাক বা রিক্সা থেকে ৪০টাকা করে আদায় করছে সংশ্লিষ্ট ইজারদার, না দিলে মারধরও করছেন তারা।
বরিশাল থেকে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাক চালক মো:কবির হোসেন বলেন, আমি ট্রাক আনলোড করার জন্য চরফ্যাশন বাজারে একটু আগে আসলে, ফরেষ্ট অফিসে সামনে দুই ব্যাক্তি আমাকে গাড়ি থামানোর জন্য সিগনাল দেয়, গাড়ি থামালে তারা আমার কাছে পৌরসভার টোলের জন্য ৫৫০ টাকা দাবি করে, টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা প্রথমে গালিগালাজ ও পরে আমাকে মারধর করে।
সি এন জি চালক মোঃ আনোয়ার, বলেন আমি প্রায় প্রতিদিন ভোলা সদর বাস স্ট্যান্ড থেকে যাত্রী নিয়ে চরফ্যাশনে আসি এ কারণে আমাকে ৫০-১০০ টাকা টোল দিতে হয় না দিলে, গাড়ির চাবি রেখে দেয় তারা।
সরেজমিনে আরো দেখা যায় ট্রাক, সিএনজি, পিকআপসহ যে সমস্ত যানবাহন তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দ্রুত চলে যাওয়ার চেষ্টা করে তাদের মোটোরসাইকেল দিয়ে গতিরোধ করে টোল আদায় করা হয়।
স্থানীয় ব্যাটারি চালিত বোরাক, অটো রিকাশার কয়েকজন চালক জানান, এবার তারা উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানাবেন।
এবিষয় দৈনিক আজকের দর্পণসহ একাদিক গণমাধ্যম কর্মীরা পৌর মেয়র মো: মোর্শেদকে মুঠোফোনে কল করলে তিনি বলেন, এটা পৌরসভা থেকে ইজারা দেয়া হয়েছে কিন্তু শুধু মাত্র স্ট্যান্ড থেকে টোল আদায় করতে বলেছি সড়ক মহাসড়ক থেকে নয়। উক্ত বিষয় আপনারা ইজারাদার পৌর ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ মফিজ মোঃ কামাল এর সাথে কথা বলুন।
পরে ইজারাদার কামাল ও মফিজ কাউন্সিলর এর সাথে কথা বললে তারা বলেন, ভাই আপনারা পত্রিকায় রিপোর্ট কইরেন না করলে আমাদের ক্ষতি হবে, পরবর্তীতে তারা সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন এ সময় সাংবাদিকরা ম্যানেজ না হয়ে চলে আসলে তাদেরকে দেখে নেয়ারও হুমকি দেন তারা।
এদিকে চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল নোমানকে মুঠোফোনে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, চরফ্যাশন পৌরসভায় টোলের নামে চাঁদাবাজির বিষয়টি আমি জানি, আরো অন্যান্য সূত্র থেকেও আমার কাছে খবর এসেছে। এ বিষয়টা ট্রাফিক পুলিশের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। তারপরও আমি মেয়র এর সাথে কথা বলে দেখব।
এদিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এবং বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তামিম আল ইয়ামিন আজকের দর্পণকে বলেন, সড়ক মহাসড়কে কোনো টোল আদায় করা যাবেনা। খোঁজ নিয়ে দেখছি কেউ যদি করে থাকে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ পেলে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার এক কর্মকর্তা বলেন, মোঃকামাল, মোঃ মফিজ কাউন্সিলর সহ কয়েকজন ইজারা নিয়ে চলন্ত যানবাহন থামিয়ে টোল আদায় করে যাচ্ছে। তবে রাস্তায় চলন্ত অবস্থায় গাড়ি থামিয়ে টোল আদায় করার কোন বিধান নেই বলেও জানান তিনি।