আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় বিভিন্ন জাতের প্রায় ১৪ হাজার ২৩১টি পশু কোরবানির জন্য উপযুক্ত প্রস্তুত রয়েছে।
ভালো দাম পাওয়ার আশায় এসব পশু যত্ন সহকারে লালন-পালন করছেন গৃহস্থ ও খামারিরা। খামারিদের আশা এবার দেশের অন্য জায়গা থেকে পশু না এলে গতবারের চেয়ে এবার তারা অধিক লাভবান হবেন। আর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলছেন, ঈদে কোরবানির পশুর কোন সংকট হবেনা বরং চাহিদার অতিরিক্ত পশু প্রস্তুত রয়েছে।
উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় মাঠে চড়ে বেড়াচ্ছে একাধিক গরু। প্রতিদিন সকাল থেকে মাঠে সবুজ ঘাস লতাপাতা খেয়েই প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে ওঠছে দেশীয় জাতের গরু। দেশী জাতের গরু পালনে কৃষকের অতিরিক্ত কোনো খচর নেই। তাই স্বল্প খরচে অধিক লাভবানও হয় চাষীরা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে সম্প্রতি আটশ ৯০টির বেশি খামারে চারশ ৯৫ জন খামারি গরু মোটাতাজা করণসহ গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। এমনকি কুরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ১৪ হাজার ২৩১টি উপযুক্ত পশু। এখানকার চাহিদা ১৩ হাজার ৮০০পশু। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় প্রায় ৪৩১টি গবাদিপশু বেশি প্রস্তত রাখা হয়েছে।এরমধ্যে জাতভেদে গরুর সংখ্যা ৬ হাজার ১১৫টি, মহিষ ৩০০টি এবং ছাগল ২ হাজার ১১৫ টি ও ভেড়া ১ হাজার ১১টি।
উপজেলার ছোট-বড় খামারগুলোতে পশু মোটাতাজাকরণে যাতে কোনো ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক খাবার ব্যবহার না করেন সেজন্য মেডিকেল টিমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ কার্যালয়।
এদিকে চরফ্যাশনের বিভিন্ন এলাকার কৃষক ও খামারিরা জানান, কোরবানি যোগ্য পশুগুলোকে বাড়তি যত্নে ব্যস্ত সময় পার করছে। কেউ বাড়িতে আবার কেউ খামারে এসব পশু মোটাতাজা করছেন। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা সবুজ ঘাস খাইয়ে পশু মোটাতাজা করছেন তারা। খড়ের পাশাপাশি খৈল, গমের ভুসি, ভুট্টার গুড়া, ধানের কুড়া, মুগের ভুসি, খড় ও বুটের খোসা খাওয়ান অনেকে। গতবছরের চেয়ে এবছর পশুর খাবারের দাম বেড়েছে। একএকটি গরুর খাবার বাবদ প্রতিদিন কমপক্ষে ৪-৫শ টাকা খরচ হচ্ছে। তবে খাবারের দাম বেশি হলেও এবার ভালো দামে পশু বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী পশু মালিকেরা।
শনিবার (১০ জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই উপজেলার পশুর হাট গুলোতে গরু কেনাবেচা জমে উঠছে। তাই গরু মোটাতাজা করতে গৃহস্থ ও খামারিরা ঘাস, খড়, খৈল, ভুষিসহ দেশীয় খাবারের মাধ্যমে হৃষ্টপুষ্ট করার জন্য খাবার খাইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এর সাথে কেউ গরু বিক্রি করতে শুরু করেছে। আবার কেউ কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বেশি দামে বিক্রি আশায় রয়েছেন।
একাধিক গরু ক্রেতা বলেন, এ বছর গরুর দাম এখনই অনেক বেশি। সামনে আর ও বেশি হবে এমন আশঙ্কা করছেন তারা। অন্যদিকে গরু মোটা-তাজা করণের নিষিদ্ধ ওষুধ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ওষুধের ফার্মেসি থেকে শুরু করে হাট-বাজারে। সহজলভ্য হওয়ার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন অসাধু গৃহস্থ ও খামারিরা।
গরু ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন মিয়া জানান, এ উপজেলায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গৃহস্থ ও খামারিরা গরু প্রস্তুত করেছেন বিক্রি করার জন্য। তিনি আশা প্রকাশ করেন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এ উপজেলায় গরু প্রবেশ না করলে এবার গরু’র ভাল দাম পাবেন গৃহস্থ ও খামারিরা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো. রহমত উল্লাহ জানান, প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে ওঠা দেশীজাতের গরুর চাহিদা অনেক বেশি। এ উপজেলায় পর্যাপ্ত কোরবানির জন্য দেশিও গরু রয়েছে। তা উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে পাঠাতে পারবে গৃহস্থ ও খামারিরা। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষে হতে প্রতিদিন গ্রামে গিয়ে গৃহস্থ ও খামারিদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।