চলমান ডলার
সংকট, মুদ্রাস্ফীতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও এলসি খোলায় ব্যাংকের অনীহা, বৈশ্বিক মন্দার
কারণে ধস নেমেছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। ফলে কমতে শুরু করেছে
বন্দরের আয়। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিপিং কোম্পানি ও পণ্য পরিবহন খাত
সংশ্লিষ্টরা পড়েছে বিপাকে।
গত ৪ মাসে বন্দরে
কনটেইনার হ্যান্ডলিং এর পরিমান কমেছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দর-কাস্টমসে রাজস্ব আয় কমেছে
হাজার কোটি টাকা। জাহাজ ভাড়া কমলেও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের সাথে জড়িত শিপিং এজেন্টগুলোর
আয় কমে গেছে। আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ায় পণ্য পরিবহনে জড়িত ট্রাক, লরি ও প্রাইম মুভারের
চাহিদা কমেছে। ফলে পণ্য পরিবহন খাতের আয়েও পড়েছে ভাটা। ।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল,
ফলমূল, কসমেটিকসসহ বিভিন্ন বিলাসবহুল পণ্য আমদানি হয়। তবে ডলার সংকট, ডলারের মূল্য
বৃদ্ধি ও বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে সরকারের নিরুৎসাহের কারণে কমেছে বাণিজ্যিক পণ্যের
আমদানি। পোশাক পণ্য রপ্তানিতে লেগেছে বড় ধাক্কা। ফলে অন্য বছর বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনারে
ঠাসা থাকলেও বর্তমানে অনেকটাই ফাঁকা।
এমনটা চলতে
থাকলে বিশ্বের ব্যস্ততম ১০০ বন্দরের বৈশ্বিক তালিকা থেকেও চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানের
অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গত বছর জানুয়ারি
থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর মোট ৩২ লাখ ১৪ হাজার টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং
করে। জানুয়ারি থেকে নভেম্বরে এর পরিমান ছিলো ২৯ লাখ ৪৪ হাজার টিইইউএস কনটেইনার। চলতি
বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর একই সময়ে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে মাত্র ২৯ লাখ ৩ হাজার
টিইইউএস। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কমে যাওয়ার প্রভাবে গত বছরের
তুলনায় চলতি বছর ৪১ হাজার টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং কম হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর
সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর উল্লেখযোগ্য
হারে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমেছে। গতবছরের তুলনায় চলতি বছর আগস্টে ৫ হাজার টিইইউএস,
সেপ্টম্বরে ২১ হাজার টিইইউএস, অক্টোবরে ৫৬ হাজার টিইইউএস, নভেম্বরে ২২ হাজার টিইইউএস
কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমেছে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম
বন্দরে কনটেইনার রাখার ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক
থাকলে চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে ৪০ হাজারের বেশি কনটেইনার থাকে। বর্তমানে বন্দর ইয়ার্ডে
রয়েছে মাত্র ২৯ হাজার ৪৭৮ টিইইউএস কনটেইনার। কনটেইনার রাখার পুরো জায়গাটাই ফাঁকা পড়ে
আছে।
চট্টগ্রাম বন্দর
কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক বলেন, গতবছর চট্টগ্রাম বন্দরে যে পরিমাণ কনটেইনার হ্যান্ডলিং
হয়েছিল চলতি বছর তার চেয়ে কম পরিমাণে হ্যান্ডলিং হয়েছে। আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত
কনটেইনার হ্যান্ডলিং কম হয়েছে। পণ্যবাহী কনটেইনার না থাকায় অর্ধেক খালি রেখেই বন্দর
ছেড়ে যাচ্ছে জাহাজ। ফলে এ সমস্যার সম্মুখীন হবে চট্টগ্রাম বন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দর
দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কমে যাওয়ায় সংকটে পড়েছে পরিবহন খাত। চট্টগ্রাম বন্দরে
স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজার ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও কনটেইনারবাহী প্রাইম
মুভার চলাচল করে। চাহিদা না থাকায় গাড়ির ব্যবহার কমেছে প্রচুর।
পণ্য পরিবহনে
নিয়োজিত এসব গাড়ির বড় ধরনের সারি এখন দেখা যায় না। বন্দরের ভেতরে অনেক ইয়ার্ড ফাঁকা।
অলস পড়ে থাকতে দেখা গেছে কাভার্ডভ্যান, লরি।
বাংলাদেশ শিপিং
এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আরিফ বলেন, চলমান অবস্থা চলতে থাকলে শিপিং কোম্পানিগুলো
ব্যবসা করতে পারবে না। কাঁচামাল যদি না আসে তাহলে অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।
আমদানি যদি কমে কমে যায় তাহলে আমাদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান
ট্রাক, প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক এসোসিয়েশনের মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহমেদ বলেন,
ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে আমাদের প্রতিটা গাড়িতে ৩-৪ হাজার টাকার মত ভাড়া বেড়েছে। কিন্তু
পণ্য পরিবহন কমে যাওয়ায় আমাদের এ টাকাটা পুষিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে।