ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র বা চিলিং পয়েন্ট না থাকায় গাভির উৎপাদিত দুধ নিয়ে লোকাসান গুণতে হচ্ছে গরুর খামারিদের। ক্রেতার অভাবে খামারের গাভির দুধ প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক সময় দুধ নষ্ট হওয়ারও ঘটনা ঘটে থাকছে। সরকারি পর্যায়ে খামারিদের উৎসাহিত করার জন্য ঋণের ব্যবস্থা থাকলেও তা প্রকৃত খামারিদের দোরগোড়ায় পৌঁছে না।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় দুই হাজার ৩২৫ টি গরুর খামার রয়েছে। এরমধ্যে প্রাণিসম্পদ বিভাগের নিবন্ধিত খামার রয়েছে ২৩ টি। অন্যগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনা এখনও সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, উপজেলার পৌর এলাকাসহ সাতটি ইউনিয়নের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ছোটবড় ৫ থেকে অন্তত ১৫ টি গরুর খামার রয়েছে। এক-একটি খামারে নি¤œ ৩টি এবং উপরে ১০টির অধিক গাভি রয়েছে। সেখানে অন্তত প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ লিটার দুধ উৎপাদিত হচ্ছে। তবে উৎপাদিত দুধ শীতলীকরণ বা চিলিং পয়েন্টের অভাবে খামারিরা স্থানীয় বাজারসহ পাইকারি দুধ ক্রেতার কাছে বিক্রি করে থাকছেন।
পৌর এলাকার চকচকা গ্রামের গরু খামারি ধরম চাঁদ গুপ্ত বলেন, তার ছয়টি গাভির মধ্যে গরুর খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দুইটি গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। বর্তমানে চারটি গরু মধ্যে দুইটি গরু দুধ দিচ্ছে প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৮ লিটার। তবে ৫০ টাকা কেজি দরে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে উৎপাদিত দুধ। গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়ভাবে দুধ বিক্রি করে লাভ তো দূরের কথা প্রতিদিন লোকসান গুণতে হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে তাকে এখন পর্যন্ত কোন প্রকার প্রণোদনা দেওয়া হয়নি।
উত্তর রঘুনাথপুরের খামারি মহিদুল ইসলাম বলেন, তার খামারে ৫টি গরু রয়েছে। এরমধ্যে তিনটি দুধ দেয় প্রতিদিন অন্তত ২০ কেজি। গ্রামের বাজারে দুধের দাম আরো কম হওয়ায় দুধ বিক্রি করে গরুর খাবারেই জোগার করা যাচ্ছে না। না পারছেন গরুগুলো বিক্রি করে খামার বন্ধ করে দিতে, না পারছেন লোকসান দিয়ে খামারকে সচল রাখতে। এ নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
ফুলবাড়ী উপজেলা ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জাকারিয়া বলেন, উপজেলার কমবেশি প্রায় প্রতিটি বাড়ীতে অন্তত একটি হলেও গাভি পালনের প্রচলন পূর্ব থেকে চলে আসছে। দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হলে খামারের উৎপাদিত দুধ সংরক্ষণ করে অন্য স্থানে বিক্রি করতে পারলে লাভবান হবেন খামারিরা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সরকার খামারিদের উন্নয়নে প্রণোদনা দেওয়াসহ অনেক কল্যাণকর প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। দুধ প্রক্রিয়াকরণ মেশিনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এটি হাতে পেলেরই খামারিদের মাঝে বিতরণ করা হবে।