দেশে অনেক দিন ধরেই ডলার সংকট চলে আসছে।
নানা উদ্যোগও কোনো কাজ হচ্ছে না, বরং দিন যতো যাচ্ছে, ডলার সংকট আরও তীব্র হচ্ছে। এ
সুযোগে ডলার বাণিজ্য করছে অসাধু চক্র। খোলা বাজারে ইচ্ছামতো নেওয়া হচ্ছে দাম।
অন্যদিকে সংকট কাটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার
সরবরাহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে টান পড়েছে রিজার্ভেও। এখন রিজার্ভ কমে ২১ বিলিয়ন
ডলারের ঘরে। যদিও বিশ্লেষকদের ধারণা, আরও কম রয়েছে খরচ করার মতো রিজার্ভ। এরই মধ্যে
প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) বড় ধাক্কা লেগেছে। ৪১ মাসের মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে সর্বনিম্ন
রেমিট্যান্স এসেছে।
চলতি মাস অক্টোবরেও আশানুরূপ আসছে না রেমিট্যান্স।
অক্টোবরের প্রথম ছয়দিনে ৩২ কোটি ৫১ লাখ ৪০ হাজার ডলার এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা
তিন হাজার ৫৫৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে
এ তথ্য।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, অক্টোবরের
প্রথম ছয়দিনে যে রেমিট্যান্স এসেছে, এরমধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংগুলোর মাধ্যমে
৪ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত এক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৯৮ লাখ ৭০ হাজার
ডলার। আর বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকের
মাধ্যমে ১১ লাখ ৫০ হাজার ডলার এসেছে। রেমিট্যান্স আসার এ ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে
দাঁড়াবে প্রায় ১৬৮ কোটি ডলার বা ১৮ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।
তবে আলোচিত সময়ে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি
এমন ব্যাংকের সংখ্যা আটটি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ
ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব। আর
বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক।
বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া
এবং উরি ব্যাংক।
এর আগে সদ্য বিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী
আয় আসে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (এক টাকা সমান ১০৯.৫০ টাকা
ধরে) ১৪ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। এটি গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স বা প্রবাসী
আয়। এর আগে ২০১৯ সালের মে মাসে ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ২০ হাজার ডলার এসেছিল।
সংকটের মাঝে রেমিট্যান্স কমাকে ভালো চোখে
দেখছেন না খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, গত দুই বছরে কাজের জন্য দেশের বাইরে গেছেন ২০
লাখ প্রবাসী। দেশের বাইরে প্রবাসী বাড়ছে, অথচ দিন দিন কমছে রেমিট্যান্স। এর কারণ খুঁজে
সমাধানের দাবি তাদের।
এর আগে গত জুলাই মাসে ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ
ডলারের (১.৯৭ বিলিয়ন ডলার) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগস্টে এসেছিল
১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের প্রবাসী আয়। গত জুন মাসে রেকর্ড পরিমাণ ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার
(২.১৯ বিলিয়ন ডলার) প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। একক মাস হিসেবে যা ছিল
প্রায় তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসা প্রবাসী আয়। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৫৯
কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেকর্ড প্রবাসী আয় এসেছিল।
খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০২০ সালে হুন্ডি
বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে সর্বোচ্চ সংখ্যক রেমিট্যান্স এসেছিল। বিদায়ী ২০২২-২৩
অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২ হাজার ১৬১ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স।
এটি এ যাবৎকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে করোনাকালীন ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ
দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।