রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় মাদ্রাসা পড়ুয়া ছেলে মো. ইউসুফ (১৪) ‘হত্যার’ বিচার চাওয়ায় মাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শনিবার (২১ আগস্ট) রাত ১০ টার দিকে উপজেলার কোদালা ইউনিয়নে এসব ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন নিহত ইউসুফের মা কামরুন্নাহার।
ভুক্তভোগী কামরুন্নাহার অভিযোগ করে বলেন, গত ৫ আগস্ট উপজেলার কোদালা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড ফকিরামোড়া গ্রামে আমার মাদ্রাসা পড়ুয়া ছেলে ইউসুফের (১৪) লাশ গাছের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। পরে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয় বলে জেনেছি।
তিনি বলেন, এলাকার লোকজন বলছে আমার ছেলে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু সে আত্মহত্যা করেনি। তাকে আমার প্রতিবেশী শত্রুরাই হত্যা করে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছিল। যাতে আমার ছেলে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে বলা যায়।
তিনি আরও বলেন, গত দুই বছর ধরে বাড়ি ভিটে নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল আমার চাচা শ্বশুরদের পরিবারের সাথে। আর সে চাচা শ্বশুরদের বাড়ির পেছনেই আমার ছেলের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে। এর আগেও শত্রুরা আমার ঘরে ডাকাত ঢুকিয়ে দিয়েছিল।
কামরুন্নাহার বলেন, ৪-৫ মাস আগেও জায়গা জমির বিরোধের জেরে আমাকে অসহায় পেয়ে মারধর করে চাচা শ্বশুরদের পরিবারের লোকজন। তখন আমাকে মাথায় আঘাত করায় ১২টি সেলাই করতে হয় এবং ৮ দিন মেডিকেলে থাকতে হয়েছিল। সে সময় মামলা করলে তারা মামলা প্রত্যাহার করার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দেয় এবং কৌশলে আমার কাছ থেকে সাক্ষর নিয়ে মামলা প্রত্যাহার করিয়ে ফেলে এবং সে সময় ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ হাজার টাকা দেয় তারা। আর সে টাকা দেয়ার সময় তারা বলেছিল ওই ৩০ হাজারের পরিবর্তে লাখ টাকার ক্ষতি করবে। এ বিষয়টি পুলিশকেও জানিয়েছি। ‘সর্বশেষ আমার স্বামী বিদেশ থেকে আসলে আমরা দুইজনই এ হত্যার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসছে কিনা এবং যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে জানাতে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করি। আর পুলিশের সাথে যোগাযোগ করার বিষয়টি প্রতিপক্ষ জানতে পেরে তারা আমাদের বৈঠক বসতে বলে। গতকাল রাতে বৈঠকে উপস্থিত না হওয়ায় প্রতিপক্ষের পরিবারের কয়েকজন মহিলা ও বাইরে থেকে ভাড়া করা বেশ কিছু লোকজন আমাদের ঘরে এসে প্রথমেই আমরা স্বামী-স্ত্রী দুইজনের চোখে মরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে দেয়। পরে আমাদের জোর করে ঘর থেকে বের করে অন্য একটা ঘরে বেঁধে রেখে নির্যাতন করে।’
কামরুন্নাহার আরও বলেন, বলতে পারছি না সে ধরনের নির্যাতনও করছে তারা। মারধর তো করেছেই। এমনকি আমার কাপড় খুলে ভিডিও করেছে তারা। পরে ৩ নং ও ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খবর পেয়ে আমাদের সেখান থেকে উদ্ধার করে। আমরা উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছি। এ বিষয়ে অভিযোগ করতে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানায় যেতে ভয় লাগছে। পথিমধ্যে তারা আমাদের ফের হামলা করতে পারে। তাই হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আমরা সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কলের এএসপি আনোয়ার শামীম স্যারের কাছে যাই। কিন্তু সেখানে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও দেখা করতে পারিনি। পরে জানতে পেরেছি তিনি চট্টগ্রামে কাজে গিয়েছেন।’
কামরুন্নাহারের প্রবাসী স্বামী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ছেলের মৃত্যুর ঘটনা জেনে আমি দেশে এসেছি। গতকাল রাতে তারা আমাকেও মেরে ফেলতো। আমরা এখন কার কাছে যাব, কী করবো কিছুই বুঝতেছি না। আমরা খুবই অসহায়।
ভুক্তভোগী কামরুন্নাহার বলেন, গতকাল রাতে তাকে যেভাবে নির্যাতন করে আমার ইজ্জতহানি করছে, এরপর নিজ বাড়ি ও দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার দিকে আমি মুখ দেখাতে পারবো না। আমরা সেদিকে যাবো না। প্রয়োজনে পরিবারের সবাইকে নিয়ে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কেই আত্মহত্যা করবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি ওবায়দুল ইসলাম বলেন, কামরুন্নাহার ও তার স্বামী অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেননি বরং আমাদের কাছে একটা মৌখিক অভিযোগ এসেছে নিহত ইউসুফের বাবা জাহাঙ্গীর তাদের ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী দাবি করে অন্য একটা পরিবারের লোকজনকে মারধর করেছে এবং তারা বর্তমানে হাসপাতালে আছে।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের শুক্রবার (৫ আগস্ট) সন্ধা সাড়ে ৬টার সময় দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় কোদালা আজিজিয়া কাশেমুল বড় মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মো. ইউসুফ (১৪) এর গাছের সাথে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে।