
চট্টগ্রাম ব্যুরো:
‘ছাত্রলীগত্তুন জেন্ গুন্ডা অক্কল বেরয়, সন্ত্রাস-অক্কল বেরয়, গত্তে গত্তে গত্তে গত্তে ছাত্রলীগ ক্যান গরি গরন্ পরিবো ইয়ান আঁরা জানি’ (ছাত্রলীগ থেকে গুন্ডা বের হয়, সন্ত্রাস বের হয়, করতে করতে করতে করতে ছাত্রলীগ কিভাবে করতে হয় সেটা আমরা জানি) এসব মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ।
তিনি বলেন, হাজার হাজার সংগঠক আমি তৈরি করছি এখান থেকে। আমাকে শিখাতে হবেনা কিভাবে কি করতে হবে।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের
সংঘর্ষের পর গণমাধ্যমে এসব কথা বলেন সবুজ। ওই সংঘর্ষের সময় সুভাষ মল্লিক সবুজের সমর্থকরা
কলেজের সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি কয়েকজন ছাত্রীও গণমাধ্যমের
কাছে তাদের ওপর হামলার অভিযোগ এনেছেন।
কাউন্সিলর টিনুর ইন্ধনেই 'নরকপুরী' চট্টগ্রাম কলেজ
পরিণত হয়েছে। সংঘর্ষে কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মোছাম্মৎ
নাজমা বেগমের কক্ষটিও ভাঙচুর করেন কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
কিছুদিন পরপরই পত্রিকার পাতায় চট্টগ্রাম কলেজকে ছাত্রলীগ
দ্বন্দের বিষয়টা শিরোনাম হয়। তবে সেটি কলেজ ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের কর্মকান্ডই
দায়ী।
গত এক বছরেই কয়েকদফা সংঘর্ষে জড়ায় চট্টগ্রাম কলেজে
বিবাদমান ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের অনুসারীরা। কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি
মাহমুদুল করিমের গ্রুপটি হলো শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী
এবং সাধারন সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনুর
অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
তবে চট্টগ্রাম কলেজে এসব সংঘর্ষের পিছনে যতনা ছাত্রলীগের
কর্মীরা দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী স্থানীয় কাউন্সিলর টিনুর প্রভাব বিস্তার করা। এমনটাই
জানান কলেজের সাধারন শিক্ষার্থীরা।
সাধারন শিক্ষার্থীরা জানায়, চট্টগ্রাম কলেজ ও চকবাজার
কেন্দ্রীক সব ধরনের মারামারিতে প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন থাকে বির্তকিত টিনুর। মারামারির
সময় নিজের অনুসারীদের বহিরাগত ছেলে ও দেশীয় অস্ত্র দিয়েও সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে
টিনু গ্রুপের বিরুদ্ধে। এমনকি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে থানাতেও প্রভাব
বিস্তার করেন টিনু। টিনুর প্ররোচনায় মারামারির পরবর্তী ঘটনায় ভুক্তভোগীদের কেউ মামলা
করতে গেলেও নেওয়া হয়না মামলা।
এমনকি টিনুকেও স্বশরীরে চট্টগ্রাম কলেজে গিয়ে কলেজের শিক্ষার্থীদের ইটপাটকেল
ছোঁড়ার ছবিও দেখা যায় ইন্টারনেটে।
সর্বশেষ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম কলেজে তুচ্ছ ঘচনাকে কেন্দ্র
করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের
অনুসারীরা।
এসময় সাধারন সম্পাদক সবুজ মুঠোফোনে টিনুকে ফোন করে
ছেলে পাঠানোর অনুরোধ করেন বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে তিনি বলেন- ' যখন দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি
লাগে, তখন আমরা কলেজ থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি,তখন সবুজ দা আমার পাশে দাড়িয়ে
কাকে যেন ফোন করে বলছেন ' বদ্দা ঝামেলা অইয়ে, তাড়াতাড়ি পোয়া পাঠন, জিনিস পাঠন' ( বড়ভাই,
ঝামেলা হয়েছে,তাড়াতাড়ি ছেলে পাঠান, জিনিস পাঠান) উল্লেখ্য যে, টিনুকে সবাই বদ্দা বলেই
সম্ভোধন করেন।
আর সবুজের ফোনের
পরবর্তী সময়ে কলেজের হোষ্টেল গেইটের পশ্চিম গেইটে একটি কারে করে এসে সবুজের হাতে একটি
সাদা ব্যাগ ও দিতে দেখা যায় বলে জানান একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী।
টিনুর সাথে দেখা করার পর মাহমুদের সমর্থকদের উপর
চড়াও হতে দেখা যায় সবুজের অনুসারীদের। এসময় মাহমুদের ৬ কর্মীকেও বেধরক মারধরের অভিযোগ
রয়েছে সবুজের বিরুদ্ধে। এমনকি কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর এক ছাত্রীকেও মেরে আহত করার ঘটনা
ঘটায় সবুজের অনুসারীরা।
কলেজ শিক্ষার্থীরা
গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের ২২ তারিখ থেকে আমাদের প্যাট্রিক্যাল পরীক্ষা, প্যাট্রিক্যাল
ক্লাসের বিষয়ে কথা বলতেছি,তখন ওনা হাতে রড-টড নিয়ে এসে আমার ফ্রেন্ডকে মারা শুরু করে
দিয়েছে। আমি ওদের পায়ে পড়ে বলতেছি মারিয়েন না মারিয়েন না, আমার ফ্রেন্ডকে মারিয়েন না।
আমাদের কয়েকদিন পর পরীক্ষা,আমাদের মারিয়েন না, আমরা এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তবুও ওকে
মারছে,সবুজের ছেলেরা।
তবে ছাত্রলীগ
থেকে গুন্ডা বের হয়,সন্ত্রাসী বের হয় বলে মন্তব্য করেন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক
সুভাষ মল্লিক সবুজ।
এসময় তিনি কিভাবে
ছাত্রলীগ করতে হয় সেটাও তার জানা আছে বলে মন্তব্য করেন।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম
কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পর গণমাধ্যমে এসব কথা বলেন সবুজ।
কলেজ ছাত্রলীগের
সভাপতি মাহমুদুল করিমকে উদ্দেশ্যে করে সবুজ বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, হেডাম থাকলে
সামনা সামনি দাড়াতে বলবেন।
আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি মাহমুদুল করিম যদি সামনা সামনি দাড়িয়ে ফাইট করতে পারে তবে আমি রাজনীতিতে জুতার
মালা পড়ে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে যাব। জুতার মালা পড়েই যাবো।
সবুজের এমন আক্রমান্তক
কথাবার্তায় যে ফের কলেজটিতে সংঘর্ষ হতে চলেছে তার
আভাস অনেকটাই বুঝা যাচ্ছে দুই গ্রুপের কর্মীদের দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসেও।
কলেজটির ছাত্রলীগের
সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের অনুসারীরা একে অপরকে উদ্দেশ্য করে স্ট্যাটাস দিতে দেখা যায়। এতে সরাসরি লড়াইয়ের কথাও
উল্লেখ করা হয়।
নিজেদের গ্রুপে
কর্মী সংগ্রহ করতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন
সম্পাদক গ্রুপের অনুসারীরা। এতে উভয় পক্ষ থেকে অন্তত ১০ জন আহত হন। সংঘর্ষে কলেজের
উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মোছাঃ নাজমা বেগমের কক্ষটিও ভাংচুর
করেন কলেজ ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা।
তবে এই ঘটনায় এখনো থানায় কোন পক্ষই মামলা করেনি বলে জানা যায়।