করোনা মহামারির সময়ে গাজীপুর মহানগরীতে
রাবেয়া আক্তার (২১) নামে এক কলেজছাত্রীকে আরবি পড়াতে গৃহশিক্ষক হিসেবে যান মো. সাইদুল
ইসলাম (২৫) । এক পর্যায়ে রাবেয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। সুসম্পর্কের জেরে সবার
অগোচরে রাবেয়াকে মৌখিকভাবে বিয়ে করেন সাইদুল।
পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সাইদুলকে আরবি
পড়াতে নিষেধ করে দেয় রাবেয়ার পরিবার। সেসময় পরিবারের কথামতো সাইদুলকে এড়িয়ে চলা শুরু
করেন রাবেয়া। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাবেয়াকে গরু জবাইয়ের ছুরি দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা
করেন সাইদুল। রাবেয়াকে বাঁচাতে এলে রাবেয়ার মা ও দুই বোনকেও কুপিয়ে জখম করেন তিনি।
আরও পড়ুন<< ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সমুদ্রে মাছ ধরা নিষেধ
গত সোমবার (৮ মে) গাজীপুরের সালনায় এ ঘটনা
ঘটে। পরে বুধবার (১০ মে) রাতে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর এলাকা থেকে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা
শাখা ও র্যাব-১ এর অভিযানে সাইদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান
বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব লিগ্যাল
অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইদুল
জানান, ২০২০ সালে করোনা মহামারি চলাকালে রাবেয়াসহ তার দুই বোন ও মাকে আরবি পড়ানোর জন্য
গৃহশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান সাইদুল। এ সুবাদে তিনি প্রতিনিয়ত রাবেয়াদের বাসায় যাতায়াত
করতেন। একপর্যায়ে রাবেয়াদের পরিবারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক তৈরি হয়। এরপর থেকে তিনি
বিভিন্ন সময় রাবেয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে থাকেন। পাঁচ-ছয় মাস আরবি শেখার পর সাইদুলের
কাছ থেকে তারা সবাই আরবি পড়া বন্ধ করে দেন।
আরও পড়ুন<< প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে হামলা
এর মধ্যেই ২০২০ সালের ডিসেম্বরে রাবেয়াকে
মৌখিকভাবে বিয়ে করেন সাইদুল। পরে বিয়েটি সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য রাবেয়া ও
তার পরিবারকে চাপ দিতে থাকেন। এরপর রাবেয়ার পরিবার সাইদুলের সঙ্গে রাবেয়ার যোগাযোগ
বন্ধ করে দেয়।
এরপরও সাইদুল রাবেয়ার সঙ্গে যোগাযোগের
চেষ্টা করতে থাকেন। ২০২২ সালের অক্টোবরে উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে গাজীপুর সদর থানায় একটি
অভিযোগ করেন রাবেয়া। যার পরিপ্রেক্ষিতে সাইদুল কিছুদিন রাবেয়াকে উত্ত্যক্ত করা থেকে
বিরত থাকেন। কিন্তু গত দুই মাস ধরে রাবেয়ার কলেজে গিয়ে এবং বাসার বাইরে আসা-যাওয়ার
পথে ফের তাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন সাইদুল। একপর্যায়ে তিনি রাবেয়াকে প্রাণনাশের হুমকি
দেন।
এর মধ্যেই সাইদুল জানতে পারেন যে, রাবেয়া
উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিষয়টি সাইদুল কোনোভাবেই মেনে
নিতে না পেরে রাবেয়া ও তার পরিবারের ওপর ক্ষিপ্ত হন। পরে রাবেয়াকে হত্যার পরিকল্পনা
করেন।
আরও পড়ুন<< ব্যাট-বলের লড়াই ছাপিয়ে জয় হতে পারে বৃষ্টির
পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত রোববার (৭ মে) বিকেলে
স্থানীয় বাজারের কামারের দোকান থেকে ৬৫০ টাকা দিয়ে গরু জবাই করার জন্য একটি ছুরি তৈরি
করেন। পরদিন (সোমবার) সন্ধ্যায় ছুরি সংগ্রহ করে রাবেয়াদের বাসায় গিয়ে সরাসরি তার রুমে
ঢুকে যান। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছুরি দিয়ে রাবেয়ার মাথা, গলা, হাত ও পায়ে ছুরি দিয়ে
কুপিয়ে এলোপাতাড়ি জখম করেন। এসময় রাবেয়ার চিৎকারে তার মা ও দুই বোন এগিয়ে এলে তাদেরও
এলোপাথাড়ি কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যান। তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এসে হাসপাতালে নিয়ে
গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাবেয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। বর্তমানে রাবেয়ার মা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন
রয়েছেন।