জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের
মধ্যে প্রথম ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৮ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের
মেরিল্যান্ড রাজ্যের ক্যাম্প ডেভিডে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট
জো বাইডেন নতুন একটি শক্তিশালী ত্রিদেশীয় জোট গঠনের পরিকল্পনার কথা জানান। চীনের ক্রমবর্ধমান
উত্থানের মুখে টোকিও এবং সিউলের মধ্যে চলতে থাকা কয়েক প্রজন্মের বিভেদ সরিয়ে তাদের
মধ্যে পারস্পরিক নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করতে চান তিনি। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
এশিয়ার দেশ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের
দীর্ঘদিনের মিত্র। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে টোকিওর সঙ্গে সিউলের সম্পর্ক ভালো নয়। কোরীয়
উপদ্বীপে জাপানের ৩৫ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের জেরে তাদের মধ্যে এ বৈরিতা। ত্রিদেশীয়
জোট গঠনের পথে এটা দীর্ঘদিন ধরে অন্তরায় হয়ে রয়েছে। সম্প্রতি জাপানের প্রতি দক্ষিণ
কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়নের দৃষ্টিভঙ্গি নাটকীয়ভাবে নতুন এক সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এটি ত্রিদেশীয় শক্তিশালী জোট প্রতিষ্ঠায় বাইডেনের আশার পালে হাওয়া দিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয়
অঞ্চলবিষয়ক সহকারী কর্মকর্তা কুর্ট ক্যাম্পবেল বলেন, ক্যাম্প ডেভিডে যা ঘটতে যাচ্ছে,
তা অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রচেষ্টা। এটা বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য ত্রিপক্ষীর সমঝোতা।
তিনি বলেন, নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, শিক্ষাসহ অনেক খাতে এ সমঝোতা হতে পারে।
আরও পড়ুন>> পুড়ছে কানাডা, পালাচ্ছে মানুষ
বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, তিন
দেশের নেতারা একটি আনুষ্ঠানিক ‘পরামর্শের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ’ চুক্তিতে সই
করবেন। এ চুক্তির আওতায় তারা যে কোনো এক দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকিকে নিজেদের ঝুঁকি বলে
ধরে নেবেন এবং এটা মোকাবিলা ও জবাব দেওয়ার জন্য একে অন্যের সঙ্গে আলোচনা করতে বাধ্য
থাকবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মকর্তারা
জানান, বৈঠকে ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার এবং বার্ষিক সামরিক
মহড়ায় একসঙ্গে অংশ নিতে তিন দেশ সমঝোতা চুক্তি করবে। এ ছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত
মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোতে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হবে। একই
সঙ্গে ত্রিদেশীয় যোগাযোগে হটলাইন চালু করা হবে, যাতে সংকটময় পরিস্থিতিতে নিরাপদে যোগাযোগ
করা যায়। সম্পর্কের নতুন যুগে প্রবেশের অংশ হিসেবে তিন দেশের নেতারা প্রতি বছর একত্রে
বৈঠকে বসবেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, তিন দেশের
সম্পর্ক জোরদারের মধ্যে কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। জাপান এমন একটি চুক্তিতে যেতে চাচ্ছে
না, যেখানে সংঘাতে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
ওয়াশিংটনের এ পরিকল্পনায় দক্ষিণ কোরিয়া সম্মত হলেও জাপানকে রাজি করানো যাচ্ছে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্টদের অবকাশ যাপনকেন্দ্র
ক্যাম্প ডেভিড ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৩ সালের
মে মাসে এখানে বৈঠক করেন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিল ও মার্কিন
প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট। ১৯৭৮ সালে এখানে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি
কার্টার ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিন ও মিসরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট
আনোয়ার সাদাতের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন।
২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন তৎকালীন
ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাককে নিয়ে ক্যাম্প
ডেভিডে বৈঠক করেন। তবে তখন কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো যায়নি।