পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নে স্থল গ্রাম ও নলডাঙ্গা গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে হান্ডিয়াল কাটা নদী। নদীর দু’পাড়ে চারটি গ্রামের মানুষের পারাপারের একমাত্র ভরসা বাঁশের তৈরী সাঁকো আর বর্ষা মৌসুমে ডিঙ্গি নৌকা। একটি ব্রিজের অভাবে দু’পাড়ের মানুষ বর্ষায় নৌকা এবং খরা মৌসুমে বাঁশের তৈরি সাঁকোর উপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে থাকে। তাই এই দুর্ভোগ লাঘবে নদীর উপর একটি ব্রিজ নির্মাণের দীর্ঘদিনের দাবি এলাকাবাসীর।
উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নের স্থল, নলডাঙ্গা, চর এনায়েতপুর ও মিলনচর এই ৪টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষের ভরসা একটি মাত্র বাঁশের সাঁকো। এ সাঁকোর উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থী সহ কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকে।
স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ জরুরি কোনো রোগীকে হাসপাতালে নিতে এবং সাধারণ মানুষকে বর্ষায় নৌকা ও খরা মৌসুমে বাঁশের তৈরি সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এলাকাবাসীর। একটি ব্রিজের অভাবে এলাকার কৃষকেরাও তাদের উৎপাদিত ফসল পারাপার সহ ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।
নদীপাড়ে অবস্থিত নলডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোস্তফা কামাল বলেন, নদীর উপর একটি ব্রিজ একান্ত প্রয়োজন। ব্রিজ না থাকায় আমাদের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী সহ এলাকাবাসীর দীর্ঘদিন যাবত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। একটি ব্রিজ না থাকায় এলাকার স্কুল ও কলেজের ছাত্র ছাত্রী নৌকা বা বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পাড় হয়। ব্রিজটি নির্মাণ হলে স্কুলের ছাত্র ছাত্রী প্রতিদিন যথাসময়ে স্কুলে আসা ও দুর্ঘটনার আশঙ্খা থেকে রক্ষা পেত। এমনকি বর্ষা মৌসুমে ডিঙ্গি নৌকা ডুবে বড় দূর্ঘটনায়ও পড়তো না।
তিনি জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় পড়ালেখা থেকে অকালেই শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে। নলডাঙ্গা গ্রামের সন্তান রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককের প্রিন্সিপাল অফিসার মো. শহীদুল ইসলাম জানান, বর্ষাকাল এলেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এলাকার সবাই ডিঙি নৌকায় নদী পারাপার হয়ে থাকে। কৃষি প্রধান এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে মাঠ থেকে ফসল আনানেয়া বা কেউ অসুস্থ হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। এলাকার অসুস্থ রোগীদের পল্লী চিকিৎসকরাই একমাত্র ভরসা। দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী জনপ্রতিনিধিদের কাছে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও শুধু আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি।
হান্ডিয়াল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রবিউল করিম বলেন, এলাকাবাসীর স্বার্থে ওই স্থানে একটি ব্রিজ নির্মাণ খুবই জরুরি। ব্রিজ নির্মাণ হলে এলাকার পিছিয়েপড়া মানুষগুলোর উন্নয়ন হবে। এই ব্রিজের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের নিকট বার বার বলেছি, আশ্বাস ছাড়া কিছুই পাইনি। বাঘলবাড়ি বাজার থেকে স্থল ও নলডাঙ্গা হয়ে চর এনায়েতপুর গ্রাম পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পাকা রাস্তা সহ ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
চাটমোহর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. সুলতান মাহমুদ জানান, স্থল নদী ঘাটে ব্রিজ প্রয়োজন বিষয়টি জানতে পারলাম। এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনে সেখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকল্প প্রস্তাবনা দেওয়া হবে।
আজকের দর্পণ/পাবনা/মামুন হোসেন