ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি:
হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে পৌর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ট্রাক, মিনিট্রাক ও কাভার্ডভ্যান আটকিয়ে আদায় করা হচ্ছে এসব চাঁদা। দেওয়া হচ্ছে রশিদ। পঞ্চাশ টাকা মূল্যের ওই রশিদে লেখা রয়েছে ঘাটাইল পৌরসভা। নতুন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এবারই প্রথম চাঁদা আদায় শুরু হয়েছে। ঘাটাইল পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.আব্দুর রশিদ মিয়া। ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এর কিছুদিন পরই টার্মিনাল ব্যতিরেকে পৌরসভার নামে পরিবহন থেকে চাঁদা উত্তোলন শুরু হয়। অথচ টার্মিনাল ব্যতিরেকে সড়ক বা মহাসড়ক থেকে টোল উত্তোলন না করার জন্য সকল সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘাটাইল-সাগরদীঘি আঞ্চলিক মহাসড়কের সরকারি ঘাটাইল ব্রাহ্মণশাসন কলেজের পুকুর পাড়ে বসে আছেন মধ্য বয়স্ক তিন ব্যক্তি। তাঁদের গলায় ঝুলানো আইডি কার্ড। কার্ডে সই করেছেন মেয়র। একজনের হাতে চাঁদা আদায়ের রশিদ বই। অন্যজনের হাতে লাল নিশান। সাগরদীঘি থেকে মাল বোঝাই দু’টি ট্রাক ওই স্থানে পৌঁছালো। লাল নিশান উড়িয়ে তা থামনো হল। বোঝা গেল চালক এ স্থানের বিষয়ে আগে থেকেই অবগত। চাহিবা মাত্র পঞ্চাশ টাকার একটি নোট বের করে প্রথম ট্রাক চালক বুঝে নিলেন রশিদ। কিছুদূর এগিয়ে কথা হয় ট্রাক চালক আক্তার হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানালেন চাঁদা না দিলে ট্রাক আটকাইয়া রাখে।
আরও পড়ুন>> গাজীপুরে আগুনে পুড়ল ১১ ঝুটগুদাম
এ বিষয়ে কথা হয় চাঁদা উত্তোলনের দায়িত্ব যারা আছেন তাঁদের সঙ্গে। আকবর হোসেন জানালেন ইজারার মাধ্যমে পৌরসভা তাদের পরিবহন থেকে চাঁদা উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে। বিনিময়ে ইজারা বাবদ এক বছরের জন্য পৌরসভাকে দিতে হয়েছে তিন লাখ টাকা। ইজারায় নাকি বলা আছে পৌর এলাকার যেখান দিয়েই ট্রাক, মিনিট্রাক ও কার্ভাটভ্যান চলাচল করবে সেখান থেকেই চাঁদা তুলতে পারবেন ইজারাদাররা। টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পৌরসভার যে কোনো স্থানে যানবাহনে মালামাল উঠানামার সময়ও দিতে হবে চাঁদা। এ বাবদ দিনে উত্তোলন হয় কত টাকা? পাশে থাকা শামস উদ্দিন জানালেন সর্বনিম্ন সাত হাজার টাকা উঠে। দিনে সর্বনিম্ন সাত হাজার টাকা করে ধরে হিসেব করলে মাসে এ টাকার অংক দাঁড়ায় দুই লাখ ১০ হাজার টাকা। বছরে ২৫ লাখ বিশ হাজার টাকা। তবুও সন্তোষ্ট নন শামস উদ্দিন। তিনি বলেন, শুরুতে ছয়জন ছিলাম। পরে মেয়রের আত্মীয়-স্বজনসহ আরও যোগ হয়েছে আটজন, মোট ১৪ জন। চাঁদা আদায় করা হয় দুই জায়গা থেকে। ঘাটাইল ব্রাহ্মণশাসন কলেজের পুকুর পাড় এবং ঘাটাইল দক্ষিণপাড়া আমতলা এলাকা থেকে।
এদিকে সড়ক বা মহাসড়কে টোল আদায়ের উপর হাইকোর্টে দায়েরকৃত এক রিট পিটিশনের আলোকে ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল একটি রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ের আলোকে একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো.আব্দুর রহমান সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে টার্মিনাল ব্যতিরেকে সড়ক বা মহাসড়ক থেকে টোল উত্তোলন না করার জন্য সকল সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভা মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করার জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ হতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রতিপালনের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।
এ বিষয়ে কথা হলে ঘাটাইল পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.আব্দুর রশিদ মিয়া বলেন, এ বিষয়ে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন সেই রায়ের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। কিছু অসহায় মানুষকে স্বচ্ছলভাবে পরিবারের সদস্য নিয়ে চলার জন্য পৌরসভায় নাম মাত্র টাকা দিয়ে তাঁরা পরিবহন থেকে ৫০ টাকা করে উঠাচ্ছেন।