ঢাকার বাজারে এখন বেশির ভাগ চালের চেয়ে
আলু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে মোটা ও মাঝারি ধরনের চালের দামকে ছাড়িয়ে গেছে
নতুন-পুরোনো আলুর দাম। ক্ষেত্রবিশেষে সরু চালের দামকেও অতিক্রম করেছে আলু।
অথচ মৌসুম শুরু হওয়ার পর বাজারে নতুন আলু
এসেছে। কিছু পুরোনো আলুও এখনো বাজারে আছে। তবু আলুর দাম কমছে না। একই সঙ্গে শীতের মৌসুমের
অন্যান্য সবজির দামও এখনো চড়া।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার
ও রামপুরা বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি নতুন ও পুরোনো
আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে উভয় ধরনের আলুর দাম কেজিতে
অন্তত ১০ টাকা বেড়েছে। সাধারণত ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে নতুন আলু আসে এবং
এরপর এর দাম কমতে শুরু করে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের
(টিসিবি) বাজার দর অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম এখন ৪৮-৫০ টাকা।
মাঝারি চাল পাওয়া যায় ৫০-৫৫ টাকায়। আর প্রতি কেজি সরু চালের দাম পড়ছে ৬০-৭৫ টাকার মধ্যে।
ফলে সব ধরনের মোটা ও মাঝারি চালের চেয়ে আলুর দাম এখন বেশি পড়ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে
আলুর দাম সরু চালকেও ছাড়িয়ে গেছে। তবে টিসিবির প্রতিবেদনে যে সরু চালের হিসাব দেওয়া
হয়, তার বাইরেও প্যাকেটজাত সরু চাল বাজারে পাওয়া যায়। এই চাল প্রতি কেজি ৯৫ টাকা পর্যন্ত
দামে বিক্রি হয়। তবে এসব চাল মূলত উচ্চবিত্তরা কিনে থাকেন।
টিসিবির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে,
এক বছর আগে খুচরা বাজারে মোটা, মাঝারি ও সরু চালের দাম এখনকার মতোই ছিল। তবে গত বছরের
এই সময়ে আলুর দাম ছিল প্রতি কেজি ১৬ থেকে ২২ টাকা। টিসিবির হিসাবেই গত এক বছরে আলুর
দাম বেড়েছে ২২৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের
সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে হিমাগারে থাকা পুরোনো
আলু শেষ হয়ে যায় এবং নতুন আলু বাজারে আসতে শুরু করে। প্রথম কিছুদিন এর দাম বেশি থাকে।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে আলুর দাম কমতে শুরু করে। তবে এবার আলুর আগাম ফলন কিছুটা
ব্যাহত হওয়ায় এর দাম কমছে না।
আলুর মতো পেঁয়াজের বাজার এখনো চড়া। ক্রেতাকে
প্রতি কেজি নতুন দেশি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়। পুরোনো দেশি পেঁয়াজের দাম
পড়ছে প্রতি কেজি ১৫০-১৬০ টাকা।
শীতের শুরুতে বেশির ভাগ সবজির দাম কমতে
শুরু করলেও সবজির বাজার আবার চড়ে গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি বেগুন ৭০-৯০
টাকায়, শিম ৭০-৮০ টাকায় এবং টমেটো ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি
৫০-৬০ টাকা এবং প্রতিটি লাউয়ের দাম পড়ছে ৮০-১০০ টাকা। করলার কেজি ৯০-১০০ টাকা। মাত্র
হাতে গোনা দু–চারটি সবজি ৫০
টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে পেঁপে, মুলা এবং ওলকপি।
আটা-ময়দা, ডাল, তেলের মতো পণ্য আগেই উঁচু
দামে বিক্রি হচ্ছিল। এসব পণ্যের দাম কমেনি। কমেনি মাছ ও মাংসের দামও। ব্রয়লার মুরগির
কেজি পড়ছে ১৮০-২০০ টাকা, আর সোনালি মুরগি ৩১০-৩৩০ টাকা। গরুর মাংসের কেজি ৬৫০ থেকে
৭০০ টাকা। ফার্মের মুরগির বাদামি ও সাদা ডিমের ডজনপ্রতি দাম পড়ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা।
চাষের রুই মাছের প্রতি কেজির দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। মানভেদে পাঙাশ ও তেলাপিয়া ২০০
থেকে ২৩০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে।
রামপুরা বাজারের ক্রেতা আনাস উদ্দিন বলেন,
‘মাছ-মাংসের দাম
আগে থেকে বেড়ে ছিল, সেটা নাহয় মেনে নিলাম। এ সময় শীতের সবজির দাম কেন বাড়বে, তার তো
কোনো হিসাব পাই না।’