
শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি:
গত ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পরে শিবচরের মাদবরচর ইউনিয়নের কালাইহাজীর কান্দি গ্রামে একটি পরিত্যক্ত টিনশেডের ঘর থেকে অর্ধগলিত এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওইদিন বিকেলে ঘরের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। বিকেলে খেলতে থাকা ছোট ছেলেরা ঘরে উঁকি দিয়ে একটি মরদেহ দেখলে স্থানীয়দের জানায়। পরে পুলিশে খবর দিলে তারা এসে মরদেহটি উদ্ধার করে। মৃতদেহটির মুখমণ্ডল দাহ্য কোন পদার্থ দ্বারা ঝলসানো ছিল।
অজ্ঞাতনামা হিসেবে মরদেহটি মাদারীপুর মর্গে পাঠানো হলে খবর পেয়ে পরের দিন বগুড়া থেকে নিহতের স্বজনরা মরদেহটি রেজাউলের বলে শনাক্ত করে।
সেসময় নিহতের স্বজনেরা জানান, রেজাউল করিম বগুড়া থেকে শিবচরে তার এক বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে আসে। সবশেষ শিমুলিয়া থেকে লঞ্চে ওঠার পর ফোনে কথা হয় তার সঙ্গে। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিল সে। ওই ঘটনায় নিহতের ভাই আজিজুল হক শিবচর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
দীর্ঘ ১ মাস ২৬ দিন পর সোমবার (১৫ নভেম্বর) ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত এমদাদুল মুন্সী (২৩) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে শিবচর থানা পুলিশ। রেজাউল করিম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে মাদারীপুর আদালতে পাঠানো হয়। গ্রেফতার এমদাদুল মুন্সী শিবচরের মাদবচর ইউনিয়নের কালাইহাজীর কান্দি গ্রামের তোতা মুন্সীর ছেলে।
গ্রেফতার এমদাদুলের দেওয়া তথ্যমতে শিবচর থানা পুলিশ জানায়, বগুড়ার সদর উপজেলার চকসূত্রাপুর গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. রেজাউল করিম (৪০) ও কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার চর আমলা গ্রামের সরোয়ার হোসেনের ছেলে রোলাস মালিথা রনি (৪০) কর্মসূত্রে কয়েক বছর আগে নেপাল ছিল। সেখান থেকে তাদের দুইজনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। আড়াই বছর আগে দেশে আসার পরও তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে রেজাউলকে পদ্মা সেতুর প্রকল্পে কাজ দেওয়ার কথা বলে রনি শিবচরের মাদবরচরে তার শ্বশুরবাড়িতে আসতে বলে। গত ১০ সেপ্টেম্বর রেজাউল ৩ হাজার টাকা নিয়ে শিবচরের মাদবরচর আসে। তখন রনি তার সহযোগী এমদাদ মুন্সীকে (২৩) প্রকল্পের কর্মকর্তা সাজিয়ে রেজাউলকে নিয়ে রাতে শিবচরের মাদবরচরের কালাই হাজীকান্দি একটি নির্জন এলাকার পরিত্যক্ত ঘরের কাছে নিয়ে যায়। রাত গভীর হলে মোবাইলে কথা বলার অভিনয় করে সরে গিয়ে রেজাউলকে পেছন থেকে গলায় ফাঁস দেয়। রেজাউল বাঁচার জন্য ছুটতে চাইলে দুইজনে মিলে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর এমদাদ রেজাউলের ছবি তুলে তার পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। কিন্তু দরিদ্র পরিবারটি টাকা দিতে ব্যর্থ হয়। পরে পরিচয় গোপন করতে মরদেহটির মুখ পুড়িয়ে পালিয়ে যায় দুই ঘাতক।
পরে শিবচর থানা পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে হত্যার রহস্য উদঘাটনে নামে। শিবচর থানার উপ-পরিদর্শক সঞ্জীব জোয়াদ্দারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সোমবার (১৫ নভেম্বর) ঢাকার কেরানীগঞ্জের কবুতরপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে এমদাদুল হক মুন্সিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার এমদাদুল পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজ হোসেন বলেন, আমরা বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় খুনের রহস্য উদঘাটন করি এবং খুনের সঙ্গে জড়িত এমদাদুলকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করি। এমদাদুলের স্বীকারোক্তি মোতাবেক ঘটনাস্থলের পাশের একটি পাটক্ষেত থেকে নিহত রেজাউলের ব্যাগ ও জামাকাপড় উদ্ধার করা হয়। রেজাউল করিম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে গ্রেফতার এমদাদুল সরাসরি জড়িত ছিল বলে স্বীকার করেছে। অপর আসামি রোলাস মালিথা রনিকে ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।