ইউক্রেনে আগ্রাসনের পরে রাশিয়ার বিস্তৃত খাতে নিষেধাজ্ঞা আাারোপ করে পশ্চিমা দেশগুলো। বিশ্ব অর্থনীতি থেকে মস্কোকে বিচ্ছিন্ন করতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে কার্যক্রম পরিচালনা করা পশ্চিমা ব্যাংক ও জ্বালানি থেকে রিটেইল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম স্থগিত কিংবা ব্যবসা বিক্রি করে বেরিয়ে আসছে। এ পদক্ষেপ ঠেকাতে সংস্থাগুলোর রুশ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছিল ক্রেমলিন। এবার ব্যাংক ও জ্বালানি খাতের পশ্চিমা বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা বিক্রি বন্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকেই জাপানসহ পশ্চিমা দেশ ও মিত্ররা রাশিয়ার ওপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। প্রতিক্রিয়া হিসেবে পশ্চিমা ব্যবসা ও মিত্রদের রাশিয়া ছাড়তে বাধা দিয়ে প্রতিশোধ নিচ্ছে মস্কো। কিছু ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় মস্কো বন্ধুত্বহীন দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের মূল জ্বালানি প্রকল্প ও ব্যাংকগুলোর অংশীদারত্ব বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত এটি কার্যকর থাকবে।
সম্প্রতি প্রকাশিত ও ভ্লাদিমির পুতিন স্বাক্ষরিত এ ডিক্রি অবিলম্বে কার্যকরের কথা বলা হয়েছে। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া এবং এতে সমর্থনকারী দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের লক্ষ্য করে এটি জারি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তারা প্রডাকশন শেয়ারিং এগ্রিমেন্ট (পিএসএ), ব্যাংক, জ্বালানি সরঞ্জাম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের অংশীদারত্ব থেকে শুরু করে জ্বালানি তেল, গ্যাস, কয়লা ও নিকেল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের অংশীদারত্ব বিক্রি করতে পারবে না। ডিক্রিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ছাড় দিতে পারেন এমন ক্ষেত্রে ক্রেমলিনের অনুমোদনের জন্য ব্যবসা বিক্রি করতে চাওয়া ব্যাংকগুলোর একটি তালিকা প্রস্তুত করতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বলা হয়েছে। ডিক্রিতে কোনো বিনিয়োগকারীর নাম উল্লেখ করা হয়নি। এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় বিদেশী অংশীদারত্ব থাকা প্রায় সব বড় আর্থিক ও জ্বালানি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। গত সপ্তাহে দেশটির রাষ্ট্রীয় জ্বালানি তেল সংস্থা রসনেফট সাখালিন-১ ক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন পতনের জন্য এক্সনমবিলকে দায়ী করেছে। মার্কিন জ্বালানি জায়ান্ট জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি তার ওই প্রকল্পে থাকা ৩০ শতাংশ অংশীদারত্ব অন্য পক্ষের কাছে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এর আগে সাখালিন-২ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকল্প নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। কারণ প্রকল্পটিতে অংশীদারত্ব থাকা শেল দেশটিতে কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এ অবস্থায় ২ আগস্ট পৃথক একটি সরকারি ডিক্রিতে সাখালিন-২ প্রকল্পে যুক্ত শেল, জাপানি ট্রেডিং হাউজ মিত্সুই অ্যান্ড কোম্পানি এবং মিত্সুবিশি করপোরেশনকে তাদের অংশীদারত্ব দাবি করার জন্য এক মাস সময় দিয়েছে। তবে নতুন ডিক্রিতে সাখালিন-২ প্রকল্পের কথা বলা হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এক্সনমবিল। এ নিষেধাজ্ঞার আগে বৃহস্পতিবার এক্সন জানিয়েছিল, সাখালিন-১ প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। যদিও বিনিয়োগ প্রত্যাহার একটি জটিল প্রক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করেছে সংস্থাটি। এদিকে শেলও প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসার বিকল্প খোঁজার কথা জানিয়েছে। ইতালির ইউনিক্রেডিট, ইনটেসা, মার্কিন সিটিগ্রুপ ও অস্ট্রিয়ার রাইফাইসেন ব্যাংক রাশিয়া থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ফরাসি সোসিয়েট জেনারেল ও ব্রিটিশ এইচএসবিসি ব্যাংকগুলো দেশটিতে থাকা কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে চায়। বিষয়টি নিয়ে সিটিগ্রুপও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে একটি ফাইলিংয়ে মার্কিন ব্যাংকটি জানিয়েছে, রাশিয়ায় থাকা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হবে। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি দেশটিতে নতুন কোনো ব্যবসা কিংবা গ্রাহক যুক্ত করা বন্ধ করে দিয়েছে।