চারদিকে পানি
আর পানি। গ্রামাঞ্চলের পুকুর, খাল, বিল, নদী, জলাশয় আর শস্যক্ষেত পানিতে থই থই করছে।
দিনের পর দিন মুষলধারে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। ঘর থেকে বের হওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ছে। এমনই
স্বাভাবিক চিত্র বর্ষাকালের।
কিন্তু এবছর
দেখা গেছে তার সম্পুর্ণ বিপরীত চিত্র। বর্ষার ভরা মৌসুমেও বৃষ্টির দেখা নেই। বৃষ্টি
এই আসছে, এই আসবে করে লুকোচুরি খেলছে বর্ষা। চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে দেশের বেশিরভাগ
অঞ্চলে এখনো বৃষ্টি হয়নি। কোনো কোনো অঞ্চলে যে বৃষ্টি হচ্ছে তাও সামান্য। তাইতো কম
বৃষ্টি ও বেশী তাপমাত্রার বর্ষাকাল বিরাজ করছে দেশে।
এদিকে গ্রামাঞ্চলে
বৃষ্টির আশায় আশায় দিন গুণছে কৃষক। কৃষিতে প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছেন না তারা। গ্রামের
নদ-নদীতে পানি কম। পানির অভাবে দেশের অনেক অঞ্চলে কৃষিকাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
পাশাপাশি বইছে
তাপপ্রবাহ। শ্রাবণেও অনুভূত হচ্ছে চৈত্রের গরম। আর বর্ষার যৌবনেও দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল
বৃষ্টিহীন। ঝকঝকে রোদ, আবার আকাশ ঢেকে যাচ্ছে মেঘে। এই রোদ, এই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। এ
যেন মেঘের লুকোচুরি। প্রকৃতির এই বৈরি আচরণ কোনোভাবেই যাচ্ছে না বর্ষার চরিত্রের সঙ্গে।
এ যেন বৃষ্টিহীন
বর্ষা। দুই দশকেও দেখা যায়নি এমন বৃষ্টিহীন বর্ষাকাল। আষাঢ় ও শ্রাবণ। এই দুই মাস বর্ষাকাল।
বাংলাদেশে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বৃষ্টি থাকে। সবচেয়ে ভারী বৃষ্টি হয় শ্রাবণের
শুরুতেই। এ বছর ভিন্নরূপ দেখিয়েছে শ্রাবণ। বৃষ্টির দেখা মেলেনি শ্রাবণে।
আবহাওয়াবিদরা
বলছেন, বিশ্বজুড়ে আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। তারা জানিয়েছেন, এ বছর
সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টি হচ্ছে। চলতি মাসে কোথাও কোথাও ৭০ শতাংশের
কম বৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে ১ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস
বেশি থাকছে।
তারা আরও বলছেন,
বর্ষার এমন আচরণ অতীতেও দেখা গেছে। মৌসুমি বায়ুর নিষ্ক্রিয়তায় এ বৃষ্টিহীনতা। জলবায়ু
পরিবর্তনের প্রভাব এজন্য দায়ী।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের
তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসেও সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। সে
সময় রাজশাহী বিভাগে ৪৮, বরিশাল বিভাগে ৩৬, ঢাকা বিভাগে ১০, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৩, চট্টগ্রাম
বিভাগে ২৮, খুলনা বিভাগে ২০ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। তবে সিলেটে স্বাভাবিকের চেয়ে
৫৫ শতাংশ এবং রংপুরে ১৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার
(২৫ জুলাই) বৃষ্টি হওয়ার খবর দিল আবহাওয়া অফিস। উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ-দক্ষিণ ওড়িশা
উপকূলের অদুরে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায়
অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
এ অবস্থায় বৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে
এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়,
মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারি অবস্থায়
রয়েছে। এ অবস্থায় আজ বুধবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের
অনেক জায়গায়; রংপুর, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায়
এবং রাজশাহী বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি
ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের
ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এ ছাড়া সারাদেশে
দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে
পারে। তবে, ঢাকা, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, পাবনা, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী ও মৌলভীবাজার
জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা প্রশমিত হতে পারে। পরবর্তী ৪৮
ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। বর্ধিত পাঁচ দিনে আবহাওয়া সামান্য পরিবর্তন
হতে পারে।