মৎস্য খাতে
বরফের চাহিদা অপরিসীম। জেলে, আড়ৎদার, পাইকারসহ মৎস্য ব্যবসায়ী সকলের মাছ সংরণক্ষ থেকে
বাজারজাতকরণ পর্যন্ত প্রয়োজন হয় বরফের। কিন্তু বরফ কল মালিকদের সিন্ডিকেটের মুখে জিম্মি
হয়ে পরছে বরগুনার পাথরঘাটাসহ উপকূলীয় মৎস্য ব্যবসা।
সিন্ডিকেটের
মাধ্যমে নিজেদের মতো করে বাড়ানো হয় বরফের দাম। বরফের দাম বৃদ্ধির কারণে এর প্রভাব পরেছে
মাছের উপর। আর এ সিন্ডিকেটে সামনের সারিতে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, খাজা বরফ
কলের মালিক মিহির বাবু, মায়ের দোয়া বরফ কলের মালিক সেলিম চৌধুরী এবং এমি বরফ কলের মালিক
সোহাগ।
খোঁজ নিয়ে জানা
যায়, পাথরঘাটা উপজেলা বরফ কল মালিক সমিতি নামে একটি সমিতির আওতায় ২২টি বরফ কল রয়েছে।
এ সমিতি দুই বছর যাবত বরফ কল মালিকরা মিলে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে বরফ দ্বিগুনেরও
বেশি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি করছে। আগে বিক্রি হতো ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। তাছাড়া জেলে
বা মৎস্য ব্যবসায়ীরা নিজের খুশি মতো যেকোনো বরফ কল থেকে বরফ কিনতে পারছে না।
বরফ কিনতে হলে
আগে ওই সমিতির কাছে টাকা জমা দিতে হয়। এরপর তাদের কাছ থেকে একটি টোকেন নিতে হয়। সমিতি
থেকে জেলেদের যে বরফ কল থেকে বরফ কিনতে পারবে সেই বরফ কলের নাম নির্ধারণ করে বলে দেয়া
হয়। জেলেরা ওই বরফ কল ছাড়া অন্য কোনো বরফ কল থেকে বরফ কিনতে পারেন না। এছাড়াও জেলেদের
অপরিপূর্ণ বরফ দেওয়া হয়, এর প্রতিবাদ করলে তাদের সাথে করা হয় দূর্ব্যবহার।
বরফ কল মালিকদের
সিন্ডিকেটের মুখ থেকে বাঁচাতে ট্রলার মালিক ও বরগুনা জেলা মৎসবীজ ট্রলার মালিক সমিতি
সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুম আকন নিজেই বরফ কল কিনেছেন। সিন্ডিকেটের ঊর্ধ্বে গিয়ে বরফ
তৈরি করে জেলেদের কাছে কম দামে বিক্রি করছেন তিনি।
সিন্ডিকেটের
বিষয় মাসুম আকন বলেন, বর্তমানে এক ক্যান বরফ তৈরি করতে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা খরচ হয়। এই
বরফ ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি করে বরফ কল মালিকদের সিন্ডিকেট। গত আগষ্ট মাসের ২ তারিখ
থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত সমিতির মাধ্যমে বরফ কিনেছি। তখন বরফ কিনতে হয়েছে ১৭০ টাকায়।
সকল বরফ কল মালিকরা মিলে একটি সিন্ডিকেটের তৈরি করে জেলেদের জিম্মি করে রেখেছে।
নাম প্রকাশ
না করার শর্তে একাধিক বরফ ক্রেতার অভিযোগ, টোকেন অনুযায়ী বাধ্য হয়েই নির্ধারিত বরফ
কল থেকে বরফ কিনতে হয়। তাও আবার অতিরিকও দামে। কখনো কখনো পরিপুর্ণ না হলেও বরফ নিতে
হয়।
উপজেলা বরফ
কল মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক সেলিম চৌধুরী কাছে সিন্ডিকেটের জানতে চাইলে তিনি বলেন,
সিন্ডিকেট নিয়ে যত অভিযোগ তা সম্পুর্ণ মিথ্যা। সমিতি থেকে কোন সিন্ডিকেট করা হয়নি,
এমনকি অতিরিক্ত মুল্যে বিক্রিও হয় না। তিনি আরও বলেন, একটি বরফের বিপরীতে খরচ হয় ১২৮
টাকা, যা বিক্রি করা হয় ১৫০ টাকা।
বরগুনা জেলা
মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, বরফ মালিকদের একটি
সিন্ডিকেট চলছে যা জেলেসহ মৎস্যজীবীদের প্রতি এক রকমের নির্যাতন করছে। বরফ সিন্ডিকেট
করার বরফ কল মালিক সমিতির কোন এখতিয়ার নেই। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এ বিষয় পাথরঘাটা
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, এমন সিন্ডিকেটের অভিযোগ
শুনেছি। এ বিষয় সোমবার তাদের সাথে মিটিং করবো এবং এ রকমের প্রমান পাওয়া গেলে সিন্ডিকেট
তো থাকবেই না তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাকিল আহমেদ,
পাথরঘাটা (বরগুনা)