দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ
অবস্থানে যেতে বহু সাধনার দরকার হয়। আর প্রতিভা ও মেধা তো প্রত্যেক জাতি ও দেশেই রয়েছে।
আর খেলাটি যদি হয় ফুটবল আর দেশটির নাম ব্রাজিল। তা হলে এ সংজ্ঞা চলবে না মশাই! নারিকেল
গাছ ঝাঁকুনি দিলেই নাকি সে দেশে ফুটবলার গড়িয়ে পড়ে এমন কথা প্রচলিতই। বিশ্বকাপের সবচেয়ে
সফল দলটি ৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। প্রতিবারই তারা শিরোপা জয় করতেই আসে। কেন যেন সবার
তারা পেরে ওঠে না সেভাবে। একটি ‘পারফেক্ট’ দলের সন্ধানে থাকতে হয়। ২০০২ সালে ফেনমেনন খ্যাত রোনালদো বিশ্বজয় করেছিলেন।
২০ বছর কেটে গেছে কেউ কথা রাখেনি। এবার নেইমার ও ভিনিসিয়াস জুনিয়র সে কথা রাখার জন্য
দোহায় এসেছেন।
লুসাইল স্টেডিয়ামে
ব্রাজিল আজ গ্রুপ ‘জি’-এর ম্যাচে মুখোমুখি হবে সার্বিয়ার। এ গ্রুপের অন্য দুদল ক্যামেরুন ও
সুইজারল্যান্ড। ব্রাজিলের যে স্কোয়াড এবার প্রফেসরখ্যাত কোচ তিতে গড়েছেন তা অসাধারণ।
রড্রিগো ও ভিনিসিয়াস রিয়াল মাদ্রিদে খেলেন। তারা চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে ফেলেছেন ইতোমধ্যে।
টপ ফর্মে রয়েছে। নেইমার পরীক্ষিত জাদুকর। তাকে নিয়ে অবশ্য বলার কিছু নেই। তবে তিনি
এবার পার্শ্বনায়ক পাবেন অনেক। তবে ব্রাজিলের অ্যাটাক ভয়ঙ্কর। তবে ব্রাজিলের আসল পরীক্ষা
হবে ডিফেন্সে। ২০১৮ বিশ্বকাপে সেই ডিফেন্সের গলদে তাদের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায়
নিতে হয় বেলজিয়ামের কাছে হেরে। সার্বিয়ার সমস্যা আবার আক্রমণভাগে। লড়াইটা বলা চলে সার্বিয়ার
ডিফেন্স বনাম ব্রাজিলের আক্রমণভাগের!
ব্রাজিলের দলটি
তরুণ হলেও তারা সব বড় বড় ক্লাবে খেলে। ফলে চাপ ও দ্রুতগতির ফুটবল খেলা তাদের জন্য সমস্যা
নয়। তারা ভয়ঙ্করভাবে আক্রমণ করতে সমর্থ। রাফিনহা, এডার মিলিতাও, বুনো গুইমারায়েস, এন্টনির
মতো তরুণ ফুটবলাররা দারুণ। ২০১৮ সালের কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের কাছে হারের পর
থেকে এ পর্যন্ত ৫০ ম্যাচে ৩৭টি জয় উপহার দিয়েছে ব্রাজিলকে। এ সময়ের মধ্যে ব্রাজিল কেবল
একটি আনুষ্ঠানিক ম্যাচে পরাজিত হয়েছে, ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকার ফাইনালে চির প্রতিদ্বন্দ্বী
আর্জেন্টিনার কাছে সেলেসাওরা পরাজিত হয়েছিল।
সব ধরনের প্রতিযোগিতা
মিলিয়ে শেষ সাতটি ম্যাচে দাপুটে জয়ে ব্রাজিল এমনিতেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামবে। এ
ম্যাচগুলোতে ২৬ গোল দেওয়ার পাশাপাশি হজম করেছে মাত্র দুটি গোল। এর আগে সার্বিয়ার বিপক্ষে
দুটি ম্যাচেই জয়ী হয়েছে ব্রাজিল। দুটি ম্যাচের কোনোটিতেই ব্রাজিলের জালে বল প্রবেশ
করাতে পারেনি সার্বিয়া। ১৯৯০ সালে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর আগের তিন বিশ^কাপেই গ্রুপ
পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছে সার্বিয়াকে। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে খেলার
স্বপ্ন নিয়েই কাতারে এসেছে সার্বিয়ানরা। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ২৫তম স্থানে থাকা ‘দ্য ঈগলস’ উয়েফা বাছাইপর্বে আট ম্যাচে ছয়
জয় ও দুটিতে ড্র নিয়ে শীর্ষ দল হিসেবেই কাতারের টিকিট পেয়েছে। এর মধ্যে শেষ ম্যাচে
পর্তুগালকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল সার্বিয়া। বছরের শুরুতে ড্রাগান স্টোকোভিচের দল উয়েফা
নেশন্স লিগের লিগ-এ’তে উন্নীত হওয়ার কৃতিত্ব দেখায়। ছয় ম্যাচে তারা চারটিতে জয় ও দুটি ড্র
করেছিল। সব ধরনের প্রতিযোগিতায় শেষ ১৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে তারা মাত্র দুটিতে পরাজিত
হয়েছে।
ব্রাজিল বস
তিতে আজ ম্যাচের জন্য পুরোপুরি ফিট একটি স্কোয়াড হাতে পাচ্ছেন। এন্টনি, গুইমারায়েস
ও অ্যালেক্স টেলাস সামান্য সমস্যায় থাকলেও তা কাটিয়ে উঠেছেন। ৪-১-৪-১ অথবা ৪-২-৩-১
ফর্মেশনের যে কোনো একটিতেই সেলেসাওরা খেলবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অধিনায়ক থিয়াগো সিলভার
সঙ্গে রক্ষণভাগের তিন পজিশনে আরও থাকবেন ডানিলো, মারকুইনহোস ও অ্যালেক্স সান্দ্রো।
লিভারপুলের অ্যালিসন বেকারই গোলবার সামলানোর দায়িত্ব পাচ্ছেন। কাসেমিরো ও লুকাস পাকুয়েটা
সেন্টার-মিডফিল্ডে এগিয়ে রয়েছেন। রাফিনহা ও ভিনিসিয়াস জুনিয়রের সঙ্গে উভয় উইংয়ে ১০
নম্বরের জায়গা পূরণ করবেন নেইমার। কাফ পেশির ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরা টটেনহ্যামের রিচারলিসনকে
অবশ্য মূল একাদশে আর্সেনালের গ্যাব্রিয়েল জেসুসের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হতে পারে।
নেইমার ২০২৬
বিশ্বকাপেও খেলবেন। আর ভিনিসিয়াস ও রড্রিগোর প্রথম বিশ্বকাপ এটি। অভিজ্ঞ নেইমারকে পাশে
নিয়ে তারা যে কোনো পাহাড় ডিঙ্গাতে পারে। হলুদ জার্সিধারীরা সে বিশ্বাস নিয়ে আরবের বুকে
এসেছে।