বাংলাদেশে রান্নাবান্নার
কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় সয়াবিন তেল। আর এর সিংহভাগই আসে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা
থেকে। তবে কয়েক মাস আগে লাতিন আমেরিকার দেশ দুটিতে তীব্র খরার কারণে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত
হয়, কমে যায় সয়াবিনের সরবরাহ। এসময় বিশ্ববাজারে হু হু করে বাড়তে থাকে দাম, যার প্রভাব
পড়ে বাংলাদেশেও। তবে আশার কথা, খরার প্রভাব কাটিয়ে উঠছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। দেশ দুটি
থেকে সয়াবিন তেলের সরবরাহ যেমন বাড়ছে, তেমনি কমতে শুরু করেছে দামও।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের
তথ্যমতে, লাতিন আমেরিকায় এপ্রিলের শেষের দিকের তুলনায় মে মাসে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে
প্রায় নয় শতাংশ। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা থেকে সরবরাহ বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক ক্রেতাদের চাহিদা
কমে যাওয়ায় সয়াবিনের দাম কমেছে বলে জানানো হয়েছে।
নিউইয়র্ক-ভিত্তিক
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার পাম তেল রপ্তানি বন্ধ হওয়ার দিন গত
২৮ এপ্রিল ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় সয়াবিন তেলের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়। সেসময় প্রতি
টন সয়াবিন তেলের দাম হয়েছিল ১ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলারের ওপর। সেই তুলনায় গত ২৩ মে
(ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দিন) উভয় দেশেই তেলের দাম প্রায় নয় শতাংশ কমতে
দেখা গেছে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের
প্ল্যাটস মূল্যায়ন অনুসারে, ২৩ মে আর্জেন্টিনার এফওবি আপ রিভার এবং ব্রাজিলের এফওবি
প্যারানাগুয়ায় প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১ হাজার ৭৪৫ দশমিক ৪০ ডলার, যা গত ২৮
এপ্রিলের তুলনায় যথাক্রমে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৩ শতাশ কম।
বলা হচ্ছে, দেশ
দুটিতে সয়াবিন তেলের দাম এভাবে কমে যাওয়ার পেছনে চীন-ভারতের মতো প্রধান আমদানিকারকদের
চাহিদা কমে যাওয়ার বড় ভূমিকা রয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ
নতুন করে করোনাভাইরাসজনিত লকডাউনের কারণে চীনে সয়াবিন তেল কেনার হার কমেছে। আর স্থানীয়
পর্যায়ে বিকল্প তেলের উৎপাদন বাড়ায় চাহিদা কমেছে বিশ্বের বৃহত্তম ভোজ্যতেল আমদানিকারক
ভারতের।
এছাড়া গত ২৩ মে
পাম তেল রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে এর শীর্ষ উৎপাদক ইন্দোনেশিয়া। তবে স্থানীয়
নীতির কারণে দেশটির তেল সরবরাহে অনিশ্চয়তা থাকায় এখনো রক্ষণশীল অবস্থান নিয়েছে আমদানিকারকরা।
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সয়াবিন তেল রপ্তানিতে এটিও বেশ প্রভাব ফেলেছে। এমনকি শিকাগোর
বাজারেও গত ২৮ এপ্রিল থেকে ২৩ মের মধ্যে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে প্রায় সাত শতাংশ।
বাড়ছে সরবরাহ:
সূত্রের বরাতে
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল জানিয়েছে, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় সয়াবিনের উৎপাদন ও ভাঙানোর হার
বাড়ায় দামের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে।
ভারতীয় ব্রোকারেজ
প্রতিষ্ঠান সানভিন গ্রুপের কমোডিটি রিসার্চ হেড অনিল কুমার বাগানি বলেছেন, আর্জেন্টিনায়
সয়াবিন উৎপাদন ভালোভাবেই এগোচ্ছে, প্রক্রিয়াজাতকারকদের কাছে সরবরাহও বাড়ছে। সেখানে
সয়াবিন তেল উৎপাদন আগের অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে।
আর্জেন্টিনার
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সবশেষ তথ্য বলছে, বিশ্বের বৃহত্তম সয়াবিন তেল রপ্তানিকারক দেশটিতে
গত এপ্রিল মাসে ৩৯ লাখ ২০ হাজার টন সয়াবিন ভাঙানো হয়েছে, যা আগের মাসের চেয়ে ৩৪ শতাংশ
বেশি। এর ফলে একই সময়ে স্থানীয় পর্যায়ে সয়াবিন তেল উৎপাদন ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ৭
লাখ ৮১ হাজার ১২২ মেট্রিক টনে পৌঁছেছে।
ব্রাজিলেও সয়াবিন
তেলের প্রাপ্যতা যেমন বেড়েছে, তেমনি দেশটির বায়োডিজেল শিল্পে এর চাহিদা কমেছে। ফলে
তাদের আরও বেশি তেল রপ্তানির সুযোগ তৈরি হয়েছে।
ব্রাজিলের তেলবীজ
ক্রাশার্স অ্যাসোসিয়েশন (অ্যাবিওভ) আশা করছে, ২০২২ সালে ১৮ লাখ মেট্রিক টন সয়াবিন
তেল রপ্তানি করবে দেশটি, যা গত বছরের তুলনায় নয় শতাংশ বেশি এবং ২০০৮ সালের পর থেকে
সর্বোচ্চ।