ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হঠাৎ করে বেড়ে গেছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি থাকায় শয্যা না পেয়ে অনেক রোগীকে ওয়ার্ডের বারান্দা ও ফ্লোরে অবস্থান করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে করে রোগীদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গত ১ সপ্তাহে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৪৭৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদিকে চিকিৎসা মান নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও ওয়ার্ডের পরিবেশ ভালো নয় বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক রোগী ও তাদের স্বজন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের চারতলায় ডায়রিয়া ওয়ার্ডে নিয়মিত মোট ২০টি শয্যা থাকে। তবে রোগী বেড়ে যাওয়ায় এখন শয্যা বাড়িয়ে ৩০টি করা হয়েছে। তবে এতেও জায়গা না হওয়ায় রোগীরা ওয়ার্ডের বাইরে ও ভেতরে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, চলতি বছরের তিনমাসের মধ্যে মার্চ মাসে রোগীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুন থাকে। জানুয়ারি মাসে এক হাজার ৫১ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে এক হাজার ৯৯ জন ও মার্চ মাসে এক হাজার ৮৫৪ জন রোগী চিকিৎসা নেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার সময় হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা কিছুটা বাড়ে। এ বছর মার্চ মাসে হাসপাতারেল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। রোগীদের বেশির ভাগই নারী ও পুরুষ। তাঁদের অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স দিপালী রাণী দাস বলেন, হঠাৎ করে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেড়ে গেছে। বাড়তি চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্স। তিনি বলেন, ওয়ার্ডে শয্যার চেয়ে রোগী বেশি থাকায় রোগীদেরকে বারান্দায় ও ফ্লোরে বিছানা করে দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, গত এক সপ্তাহে ৪৭৭ জন রোগী হাসপাতালে আসে। এর মধ্যে গত ৩০ মার্চ ৩৮ জন, ৩১ মার্চ ৬০ জন, ১ এপ্রিল ৭৫ জন, ২ এপ্রিল ৮০ জন, ৩ এপ্রিল ৭৭ জন, ৪ এপ্রিল ৮৮ জন, ৫ এপ্রিল ৩৯ এবং ৬ এপ্রিল বুধবার সকাল পর্যন্ত ২০ জন রোগী ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হন।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে রুহুল আমিন-(২৫) বলেন, গত ২ দিন ধরে জ্বর, বমি ও পেট ব্যাথা ও পাতলা পায়খানা হচ্ছিল। পরে এসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তির পর থেকে ২টি স্যালাইন দেয়া হয়েছে। শারিরীকভাবে খুব দুর্বল তিনি।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১ বছরের শিশু সাফোয়ান এর মা লিমা বেগম বলেন, তাদের বাড়ি সদর উপজেলার গাছতলা গ্রামে। গত মঙ্গলবার রাত থেকে শিশুটি পেট ব্যাথায় কাঁদছে, সাথে হয়েছে পাতলা পায়খানা। তাই বুধবার সকালে ১০ দিকে তিনি ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। এখন স্যালাইন চলছে।
পৌর এলাকার দক্ষিণ মৌড়াইল এলাকার ভাড়াটিয়া মিজানুর রহমান ভর্তি হন গত রোববার রাত ১২টার দিকে। তার মেয়ে বলেন, ঠিক কি কারণে তার বাবা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন সেটা বুঝতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, রোগী বেড়ে যাওয়ায় পর্যাপ্ত শয্যার অভাবে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। গরম থেকে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, শিশুর চেয়ে বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশী। তিনি এ সময় বিশুদ্ধ পানি পান করার ও ফুটপাতের দোকান থেকে কিছু না খাওয়ার পরামর্শ দেন।