কোভিডজনিত প্রতিবন্ধকতায় বিপর্যস্ত হয় বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন। রেকর্ড সর্বোচ্চ পরিবহন ব্যয়ে মহামারীর শুরু থেকেই ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে খাদ্যপণ্যের দাম। এ বাধা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয় ইউক্রেন যুদ্ধ। অস্থিরতা দেখা দেয় জ্বালানি বাজারে। এ কারণে জ্বালানির পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান রয়েছে খাদ্য ও সারের দামও। এ অবস্থায় বৈশ্বিক অর্থনীতি মন্দায় পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বব্যাংক। বৈশ্বিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ডেভিড ম্যালপাস একটি ব্যবসায়িক ইভেন্টে বলেন, আমরা কীভাবে মন্দা এড়াতে পারি তা পর্যালোচনা করাও কঠিন হয়ে উঠছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন খাদ্য, জ্বালানি ও সারের দাম ব্যাপক হারে বাড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে চীনে কভিডজনিত লকডাউন উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে। সব মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দায় পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। বিশ্ব অর্থনীতি সংকুচিত হতে পারে এমন ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির মধ্যে এ সতর্কবার্তা জানালেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান। এর আগে গত সপ্তাহে ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স (আইআইএফ) চীন বাদে অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতি মন্দার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে বলে সতর্ক করে। ডেভিড ম্যালপাস বলেন, আমরা যদি বৈশ্বিক জিডিপির দিকে তাকাই, তবে আমরা মন্দার ঝুঁকি দেখতে পাব। বর্তমানে মন্দা এড়ানোই প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। জ্বালানির দাম দ্বিগুণ করার ধারণাটিই মন্দা শুরু করার জন্য যথেষ্ট।
গত মাসে বিশ্বব্যাংক চলতি বছরের জন্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস প্রায় ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশ করেছে। মোট দেশজ উৎপাদন কিংবা জিডিপি অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির একটি পরিমাপক। এটি অর্থনীতি কতটা ভালো কিংবা খারাপ তা পরিমাপ করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায়গুলোর একটি। এজন্য অর্থনীতিবিদ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো জিডিপির তথ্য-উপাত্ত ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করে। জিডিপির পরিসংখ্যান ব্যবসাগুলোকে পর্যালোচনা করতে সহায়তা করে যে কখন কার্যক্রম প্রসারিত ও আরো বেশি কর্মী নিয়োগ কিংবা কখন কার্যক্রম সংকুচিত ও কর্মী কমাতে হবে। সরকারগুলোও কর ও ব্যয় থেকে শুরু করে অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করে। সুদের হার বাড়াতে কিংবা কমাতে হবে কিনা তা বিবেচনা করার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জন্য মূল্যস্ফীতির সঙ্গে জিডিপির তথ্য একটি মূল পরিমাপক।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউরোপের অনেক দেশ এখনো জ্বালানি তেল ও গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। যদিও পশ্চিমা দেশগুলো রুশ জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। এ অবস্থায় ইউরোপীয় দেশগুলো মন্দায় পড়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। ইউএস চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত একটি ভার্চুয়াল ইভেন্টে তিনি রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ কমানোর পদক্ষেপ এ অঞ্চলে মন্দা সৃষ্টি করতে পারে বলে সতর্ক করেন। ডেভিড ম্যালপাস বলেন, উচ্চজ্বালানির দাম এরই মধ্যে জার্মান অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করেছে। ইউরোপের বৃহত্তম এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম এ অর্থনীতিতে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
বিশ্বব্যাংক প্রধানের মতে, সার, খাদ্য ও জ্বালানি ঘাটতির কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি চীনে লকডাউন বিশ্ব অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি করেছে। তিনি বলেন, চীনের লকডাউনের কারণে সাংহাইয়ের আর্থিক, উৎপাদন ও পরিবহন খাতে স্থবিরতা তৈরি করেছিল। এ কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে এখনো ধীরগতির প্রভাব রয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির রিয়েল এস্টেট খাত সংকোচনের মুখোমুখি হয়েছে। তাছাড়া ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের আগেই চীনের অর্থনৈতিক পূর্বাভাস যথেষ্ট দুর্বল হয়েছিল। সর্বশেষ লকডাউন চীনের প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশাকে আরো কমিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব তো আছেই।