বন্যার চরম দুর্ভোগের মাঝেই সিলেট ও সুনামগঞ্জ
শহরের বিভিন্ন এলাকায় নৌকায় করে ডাকাতির উপদ্রব দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। এই প্রতিবেদককে
এসএমএস-এর মাধ্যমে বিষয়টি জানান সেসব এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা। আখালিয়া ঘাট এলাকা থেকে
রাতুল রাহা নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জানান, এলাকায় ডাকাতি হতে পারে ভেবে
মসজিদ থেকে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
সিলেটের অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। দীর্ঘসময়
ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় সুনামগঞ্জের অধিকাংশ এলাকায় ফোনের নেটওয়ার্ক কাজ করছে
না। বেশিরভাগ মানুষের ফোনে চার্জও নেই। ডাকাতের ভয় থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের
সঙ্গেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বন্যদুর্গত এলাকার সাধারণ
মানুষ। জেলা শহর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায় ডাকাতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
শনিবার (১৮ জুন) দিবাগত রাতে সিলেট শহরের
বাগবাড়ি, বর্ণমালা পয়েন্ট, আখালিয়া, কানিশাইল, শামীমাবাদ সহ বিভিন্ন এলাকায় ডাকাত দল
হানা দিয়েছে বলে জানা যায়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, সুনামগঞ্জ শহরের বাঁধনপাড়া, মরাটিলা, ময়নার পয়েন্ট, নতুনপাড়া,
হাজিপাড়া ও হাসন নগরের বিভিন্ন বাসায় ডাকাতরা হানা দিয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতির কারণে নিচু বাসাবাড়িগুলো
ছেড়ে অনেকেই বহুতল ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ডুবে যাওয়ায় বিদ্যুৎও
নেই। ফলে অন্ধকারে ডুবে থাকা শহরের বিভিন্ন ঘরবাড়িতে আচমকা ডাকাত ঢুকে পড়ার আশঙ্কা
করছেন অনেকে।
সুনামগঞ্জের বাসিন্দা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের
সাবেক শিক্ষার্থী সৌরভ দাস পার্থ বলেন, 'ডাকাতির ব্যাপারে পরিচিতজনরা ফেসবুকে স্ট্যাটাস
দিয়েছে। আত্মীয়-স্বজনদের অনেকেও ফোন করে এমনটা জানিয়েছেন।' সেসময় পুলিশের সাথে যোগাযোগ
করতে না পেরে তিনি সিলেট সদরে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দলের দায়িত্বে থাকা ক্যাপ্টেন
ফয়সলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ক্যাপ্টেন ফয়সল তার সহকর্মীদের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার
চেষ্টা করছেন। তবে ইতোমধ্যেই পুলিশও টহল শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
সুনামগঞ্জের বাসিন্দা ও প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের
ছাত্র দূর্বার শামিত আদি জানান, কিছুক্ষণ আগে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার কথা হয়েছে।
তারা জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক থাকতে
বলা হচ্ছে।
এর আগে সুনামগঞ্জ শহরের হাসন নগরের ও জেলা
আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট রবিউল লেইস রোকেস জানান, হাসন নগর থেকে হাজীপাড়া
পর্যন্ত শহরের দক্ষিণাংশে ডাকাতি হচ্ছে। পুলিশের সুপারের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। সুনামগঞ্জ
সদর থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। মোবাইল নেটওয়ার্কের সমস্যা হওয়ায় যে কারোর
সঙ্গে যোগাযোগে বেগ পেতে হচ্ছে। এদিকে শহরের ময়নার পয়েন্টে পৌর কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ
আল নোমানের বাসায় ডাকাতি হয়েছে।
অ্যাডভোকেট রোকেস আরও জানান, জাতীয় জরুরি
সেবা-৯৯৯ এ কল দিয়ে সাড়া পাননি তিনি। 'হয়তো একসঙ্গে অনেক চাপ সামলাতে না পেরে তাদের
লাইনটি ব্যস্ত আছে। স্থানীয় থানাপুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না নেটওয়ার্কের সমস্যার
কারণে'
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার (সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত
অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. মিজানুর রহমান ডাকাতির ব্যাপারে বেশকিছু ফোন পেয়েছেন বলে নিশ্চিত
করেন। তিনি সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন বলে জানান।
সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির
অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশের সিলেট রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি)
মফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা
নিতে ও নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
পুলিশ কাজ করছে।