আবদুল্লাহ আল মোহন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙ্গা ও অবমাননার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচি পালিত হয়েছে ঢাকার ভাসানটেক সরকারি কলেজে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি ভাসানটেক সরকারি কলেজ ইউনিট, ঢাকার আয়োজনে শনিবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ স্মরণে স্থাপিত কলেজের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণের ‘বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ ম্যুরালের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও সমাবেশে কলেজের শিক্ষকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
‘জাতির পিতার সম্মান, রাখবো মোরা অম্লান’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত মানব বন্ধন ও সমাবেশে জাতির পিতাকে যারা অসম্মান করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে সব পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের আয়োজিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়ে আায়োজিত কর্মসূচিতে বক্তব্য প্রদানকালে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহমুদা খাতুন বলেন, ‘ভাস্কর্য হচ্ছে একটি শিল্প, যা নান্দনিক সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। আর মূর্তি বানানো হয় ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে উপাসনা করার জন্য। ভাস্কর্য আর মূর্তি এক নয়। যারা ভাস্কর্যকে মূর্তি বলে তাদের জ্ঞানের স্বল্পতা ও দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে সমস্যা রয়েছে। আমাদের বুঝতে হবে- ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো মানেই পূজা করা নয়।’
তিনি ভাস্কর্য ও মূর্তিকে আলাদা হিসেবে দেখার কথা জানিয়ে আরো বলেন, ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, বঙ্গবন্ধু- এসব নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই। এখনো এ দেশে কিছু মানুষ দেখা যাচ্ছে যারা জাতির পিতাকে অশ্রদ্ধা করছেন। ভাস্কর্য ভাঙ্গার মতো দুঃসাহস দেখাচ্ছে। তাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করছি।’
বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও বাঙালির আত্মপরিচয়ের অনুসন্ধিৎসুদের চেতনা বিকাশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখে উল্লেখ করে কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ও দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান রফিক বলেন, ‘ভাস্কর্য মোটেও ধর্মীয় বিষয় নয়, এটি শিল্পকর্মের অংশ। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে এটি যুগ যুগ ধরে প্রচলিত। হঠাৎ করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে অপরাজনীতি শুরু হয়েছে।’
রাতের অন্ধকারে ভাস্কর্য ভাঙ্গাকে আমরা সহজভাবে মেনে নিতে পারি না উল্লেখ করে তিনি বলেন ‘বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না, আর বাংলাদেশ না হলে এত ক্যাডার সার্ভিস সৃষ্টি হতো না। যারা বাংলাদেশের চাকা পেছনে নিতে চায় সেই একাত্তরের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনাশের জন্য বেছে নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য যারা ভেঙ্গেছে তারা দেশবিরোধী, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
সমাবেশে শিক্ষকবৃন্দ দৃঢ়চিত্তে ‘জাতির পিতার সম্মান, রাখবো মোরা অম্লান’ অঙ্গীকার ব্যক্ত করে জানান, আমরা ক্যাডার সার্ভিসের সবাই আজ অঙ্গীকার করছি যে জাতির পিতার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোন প্রকার অসম্মান আমরা হতে দিবো না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান ‘জয় বাংলা’কে হৃদয়ে ধারণ করে আমরা সবাই স্বাধীনতার প্রশ্নে ইতিবাচক অবস্থান গ্রহণ করবো। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে সঠিক পথে পরিচালনা করার সুরুচির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে না পারলে আমাদের শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, সংশপ্তক, অপরাজেয় বাংলাসহ আরও অনেক সৃষ্টিই ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে।
‘বাংলার হিন্দু, বাংলার খ্রিস্টান, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার মুসলমান, আমরা সবাই বাঙালি’ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি এই দিক তুলে ধরে শিক্ষকবৃন্দ আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের অল্পকিছু বাঙালি দোসর ছাড়া এ দেশের বেশির ভাগ মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছিল সাম্প্রদায়িক চিন্তা আর ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা। দুঃখজনক যে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির কাছাকাছি সময়ে দেশে আমরা দেখতে পাচ্ছি ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর আস্ফালন। ১৯৭১ সালে সেই বাঙালিরাই গণহত্যা চালানো পাকিস্তানিদের দালালি করেছিল, যাদের মন ছিল ধর্মান্ধতায় আচ্ছন্ন।
যারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করতে চায়, ধর্মের ভিত্তিতে যারা মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে, সেই ধর্মান্ধ গোষ্ঠী আজ প্রকাশ্যে চিৎকার করে ভাস্কর্য ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যসহ অন্য ভাস্কর্যে আঘাত করে ক্ষতিসাধন করছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অপশক্তি গোষ্ঠীটির ভূমিকা প্রতিরোধে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সক্রিয় থাকার আহ্বার জানিয়ে সমাবেশ শেষ হয়।