জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩ তম জন্মদিন উপলক্ষে ১শ৩টি নৌকা দিয়ে একটি বেতের তৈরী বড় নৌকা বানিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বিহাইর গ্রামের নৌকা প্রেমী বিকল চন্দ্র সরকার।
নিজের নার্সারী থেকে পাওয়া লাভের টাকা দিয়ে গত ১৪ মাস ধরে কাজ করে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আদলে এই নৌকাটি তৈরী করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসে নৌকাটি তৈরী করে এলাকায় ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছেন। পাশাপাশি তৈরি করেছেন পুঁতি দিয়ে ছোট আকারে আরো ৭টি নৌকা। নিজ বাড়িতে এমন কর্মযজ্ঞ করেছেন তিনি।
জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বিহাইর গ্রামের রাখাল চন্দ্র সরকারের ছেলে বিকল চন্দ্র সরকার। শহরের একটি বেসরকারী ব্যাংকে কর্মরত আছেন তিনি। পাশাপাশি তার গ্রামের বাড়ী বিহাইরে তার পত্রিক সম্পত্তিতে নার্সারীতে কৃষকের কাজ করে জীবন যাপন করেন। তিনি রাজনীতি না করলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অনেক ভালবাসেন। তাই বাংলাদেশ সৃষ্টির এই মহানায়ককে নিয়ে কিছু করার প্রবল ইচ্ছা ছিল তার হৃদয়ে। আর সেই ভালবাসার টানেই নিজের নার্সারী থেকে অর্জিত আয় দিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে ব্যতিক্রম কিছু করার চিন্তা করেন।
২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে তিনি একটি নান্দনিক নৌকা তৈরীর কাজ শুরু করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর ১০৩ তম জন্মদিনকে সামনে রেখে বেতের তৈরী ছোট ছোট ১শ ৩টি নৌকা দিয়ে বড় একটি নৌকা তৈরী করেছেন। পাশাপাশি পুতি দিয়ে কাচের বক্সে আরো ৭টি নৌকা নিজ হাতে বানিয়েছেন। তার এই কাজে সহযোগীতা করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ বন্ধুবান্ধবরা। এদিকে ব্যতিক্রমী নৌকা তৈরির খবর এলাকায় ছড়িয়ে পরলে প্রতিদিন উৎসুক জনতা তার তৈরিকৃত সৃষ্টিকর্ম নৌকাগুলো একনজর দেখার জন্য তার গ্রামের বাড়িতে ভিড় করছেন।
বিকল চন্দ্র সরকার জানান, ছোটবেলা থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে ভালোবাসেন। তাই জাতির জনকের ১০৩তম জন্মদিনে কি করা যায় সেই চিন্তা থেকে নিজ খরচে বাঁশ- বেত ও পুঁতি দিয়ে কারুকার্যের মাধ্যমে লাল-সবুজের পতাকার আদলে তৈরি করতে থাকেন ছোট আকারের নৌকা। একে একে ১০৩টি নৌকা তৈরি করেন তিনি। পরে সবগুলো নৌকার সমন্বয় করে বৃহৎ আকারের একটি নৌকা তৈরি করেন।
বিকল আরও জানান, অবসর সময়ে বাবার নার্সারিতেও কাজ করেন তিনি। নিজের চাকরি এবং বাবার নার্সারিতে থেকে উপার্জিত লভ্যাংশের টাকা ব্যয় করে গত এক বছরের অধিক সময় ধরে এই নৌকাগুলো তৈরি করেছেন তিনি। নিজের এলাকা ছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রতিটি অফিসে পুঁতি দিয়ে তৈরি কাঁচের বাক্সে রাখা তার তৈরি নৌকা বিনামূল্যে বিতরণ করতে চান। তার তৈরি বড় নৌকাটি বিনামূল্যে কারও মাধ্যমে হলেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছে দিতে চান বিকল।
তিনি আরো জানান , দলের নেতা না হয়েও বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসা যায়, সেটি আমি কাজের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি গণমাধ্যমের মাধ্যমেও আমার এই কাজের কথা জানতে পারেন তাইলেই আমি খুশি। কোনো চাওয়া পাওয়ার জন্যে নয়, জাতির জনকের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তিনি এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগটি গ্রহণ করেছেন। তার ইচ্ছা নিজ হাতে পুঁতি দিয়ে তৈরি করা নৌকা নৌকাগুলো বিনামূল্যে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অফিসে বিতরণ করবেন।
আতাউর রহমান নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বিকলের এই নৌকা তৈরির কথা জানতে পেরে আমরা দেখতে এসেছি। এখানে এসে তার নিজের হাতে তৈরি করা নৌকাটি দেখে আমাদের খুব ভালো লাগছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার যে ভালোবাসা সেটি অন্যরকম। আমরা চাই তার এই কর্মযজ্ঞের কথা যেন প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছায়।
জয়ন্ত সরকার নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, বিকল সরকার এলাকার নৌকাপ্রেমী একজন মানুষ। তিনি দলের প্রতি ভালোবাসা থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ১০৩টি নৌকা দিয়ে একটি নৌকা বানিয়েছেন। নৌকাটি দেখতে আমাদের এলাকাসহ আশপাশের এলাকার মানুষেরা আসছেন। আমাদের কাছেও এ বিষয়টি খুব ভালো লাগছে।
বিহাইর গ্রামের আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ সভাপতি মো. শাহজাহান মিয়া জানান, এলাকার আওয়ামী লীগের প্রতিটি মিছিল-মিটিংয়ে বিকল নৌকা নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগের প্রতিটি কার্যালয়ে তিনি বিনামূল্যে নৌকা উপহার দিচ্ছেন। তাকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বিকল চন্দ্র সরকার বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর পড়ছেন। পরিবারে পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে বিকল সবার ছোট।