রাজধানীতে চলাচল
করা বাসগুলোতে ‘ওয়েবিল’ ও ‘চেকিং’ পদ্ধতি বন্ধ করা হলেও এখনো তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। বিভিন্ন পরিবহন
এখনো তাদের ওয়েবিল ও চেকিং চালু রেখেছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন পরিবহেন বাড়তি ভাড়া আদায়
করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বাড়তি ভাড়া
আদায় নিয়ে সমালোচনার মুখে ওয়েবিল প্রথা বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক
সমিতি। তারা বলছে, ঢাকা ও এর আশপাশের শহরতলীর বাসে রাস্তায় কোনো পরিদর্শক (চেকার) থাকবে
না। এক বাসস্ট্যান্ড থেকে অন্য বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত চলাচলের সময় বাসের দরজা বন্ধ রাখতে
হবে। অর্থাৎ রুট পারমিট অনুযায়ী বাসস্ট্যান্ডের বাইরে থামিয়ে যাত্রী তোলা যাবে না।
গত সোমবার ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বুধবার (১০
আগস্ট) থেকেই তা কার্যকর করার কথা থাকলেও কেউ কেউ এখনো বহাল রেখেছে। আগের মতো এখনো
চেকাররা বাস থামিয়ে যাত্রী গুনছেন। এজন্য তাদের বাসপ্রতি ১০ টাকা করে আদায় করতেও দেখা
গেছে।
বৃহস্পতিবার
(১১ আগস্ট) মিরপুর-১ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, এই রুটে মোহনা, বসুমতি, পরীস্থান,
ইতিহাস, রাজধানী, অসিম, প্রজাপতিসহ আরও অনেক পরিবহনের বাস চালাচল করে।
এর মধ্যে ইতিহাস
পরিবহনে এখনো চেকিং প্রথা চালু রয়েছে। বিভিন্ন স্ট্যান্ডে বাস থামিয়ে বাসপ্রতি ১০ টাকা
করে আদায় করতে দেখা গেছে। তবে তাদের ওয়েবিল বাতিল করা হয়েছে।
ইতিহাস পরিবহনের
চেকার কামরুজ্জামান রবি বলেন, গাড়ির দেখাশোনার জন্য চেকিং পদ্ধতি চালু করা হয়। তারা
বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান করেন। বাসে কতজন যাত্রী আছে, কতক্ষণ পর আসছে তারা সেটি
দেখে। এ কাজের জন্য পরিবহন মালিক একজন চেকারকে মাসিক ২ হাজার টাকা বেতন দেন। এর বাইরে
স্ট্যান্ডে গাড়িপ্রতি ১০ টাকা করে দেওয়া হয় তাদের।
তিনি বলেন,
চেকার না থাকলে রাস্তায় গাড়ির বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা করেন চালকরা।
গাড়ির মালিককে চালক ও সহকারীরা আয়ের সঠিক হিসাব দেন না বলে এ পদ্ধতি চালু করা হয়। ওয়েবিলে
প্রতিদিনের যাত্রী পরিবহনের হিসাব রাখা হয়।
তবে ইতিহাস
পরিবহনে ওয়েবিল বন্ধ করা হলেও এই রুটে চলাচলকারী মোহনা, পরীস্থান, রাজধানী, বসুমতি
পরিবহনের বাসগুলো কোনো কোনো স্ট্যান্ডে ওয়েবিল বন্ধ করলেও অনেক স্ট্যান্ডে চাল রেখেছে।
মিরপুর রুটের
বেশিরভাগ বাস লোকালভাবে চলাচল করছে। কিছু কিছু বাস আগে সিটিং (বিরতিহীন) চলাচল করলেও
তা বন্ধ করা হয়েছে। তবে অধিকাংশ বাসে ভাড়ার কোনো তালিকা দেখা যায়নি। যারা ঝুলিয়েছে
তারাও নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় করছে।
আমিনবাজার থেকে
মিরপুর-১ নম্বরে এসে নামেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আগে আমিনবাজার থেকে মিরপুর-১
নম্বরের ভাড়া ২০ টাকা নেওয়া হলেও এখন ৩০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। কম দিতে চাইলে হেলপার ঝামেলা
করেন, তাই বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে।
রাজধানী পরিবহনের
একটি বাসের চালক বিল্লাল বলেন, প্রতিদিন মালিককে ৩ হাজার টাকা জমা দিতে হয়। তার ওপর
তেল খরচ ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতিসহ অন্যান্য খাতে ১ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা রয়েছে।
এর বাইরেও স্টাফের বেতন তুলতে হয়। প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার টাকা না উঠলে নিজের পকেট থেকে
দিতে হয়। সেই অনুযায়ী তাদের ভাড়া আদায় করতে হয় বলে জানান তিনি।
জ্বালানি তেলের
দাম বাড়ায় বাসভাড়া বাড়িয়েছে বিআরটিএ। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে অভিযান চালাচ্ছে তারা।
তাদের সঙ্গে থেকে অনিয়ম তদারকিতে ৯টি ভিজিলেন্স টিম গঠন করেছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক
সমিতি।
বুধবার (১০
আগস্ট) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ টিম বিআরটিএ’র ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে থেকে সব ধরনের অনিয়ম তদারকি শুরু করেছে। অতিরিক্ত
ভাড়া আদায় বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ভিজিলেন্স টিমের কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও জানিয়েছে
মালিক সমিতি।