প্রবাসী শ্রমিকদের
মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ করেছে কাতার, এমন অভিযোগ এখনো কান পাতলেই শোনা যায়। কিন্তু গতকাল
সেই শ্রমিকদের নিয়ে ভিন্ন দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করল কাতার।
যাদের অক্লান্ত
পরিশ্রমে আজ বাস্তবে রুপ নিয়েছে কাতার বিশ্বকাপ।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল
এরিয়া ফ্যান জোনে গতকাল কাতার বনাম ইকুয়েডরের মধ্যকার বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচটি
উপভোগ করেন হাজারো প্রবাসী শ্রমিক। পুরুষদের প্রায় বেশিরভাগই ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার কর্মী।
কেউ বা ভারত, কেউ বা বাংলাদেশ, কেউ বা পাকিস্তান, আবার কেউ কেউ এসেছেন আফ্রিকা থেকে।
বিশ্বকাপ মাঠে গড়ানোর পেছনের তাদের প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো অবদান রয়েছে।
উদ্বোধনী ম্যাচ
দেখার পর নিজেদের শ্রম নিয়ে অতৃপ্তি কিংবা অসন্তুষ্টি থাকার কথা নয়। বিশ্বের অন্যান্য
সমর্থকের মতো তারাও বুঁদ হয়েছিলেন খেলার ভেতরে। খেলা দেখার জন্য কেউ কাজ শেষ করে সরাসরি
যোগ দিয়েছেন ফ্যান জোনে, আবার অনেকেই আগেই ছুটি নিয়েছিলেন কর্মস্থল থেকে।
তাদেরই একজন বাংলাদেশের
মোহাম্মদ হোসেন। বিশ্বকাপের বেশ কয়েকটি অবকাঠামো প্রকল্পের অংশ ছিলেন তিনি। বর্তমানে
মেট্রো স্টেশনের দারোয়ান হিসেবে কাজ করছেন। উদ্বোধনী ম্যাচটি বেশ রোমাঞ্চ নিয়েই উপভোগ
করেছেন ৪৫ বছর বয়সি হোসেন।
আল জাজিরাকে তিনি
বলেন, ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বকাপের অংশ হওয়াটা বড় ব্যাপার আমার জন্য। কারণ প্রথমবার একটি
মুসলিম দেশ এর আয়োজন করছে। কখনো ভাবিনি এই দেশে এসে এমন গুরুত্বপূর্ণ কিছুর অংশীদার
হব। আমার জীবদ্দশায়, আমার দেশের বিশ্বকাপে খেলা বা আয়োজন করার সুযোগই নেই।
মধ্যপ্রাচ্যের
প্রথম দেশ হিসেবে ২০১০ সালে ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজকস্বত্ব পায় কাতার। ২৮ লাখ মানুষের
দেশটির পক্ষে এমন কঠিন কাজ এককভাবে করা সহজ ছিল না। তাই প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য দুয়ার
খুলে দেয় তারা।
ভারতের পিটার
বলেন, 'এখন যেমন মেট্রো বা বাস দেখছেন রাস্তায়, কাতারে এমনটা ছিল না। বিশ্বকাপ না হলে
এইসব দালান, হাইওয়ে ও সড়কের হয়তো অস্তিত্বই থাকত না। আমি খুবই খুশি, আমরা (প্রবাসী
শ্রমিক) বড় দায়িত্ব পালন করেছি।
তৃপ্তি ভরে উপভোগ
খেলা শুরু হওয়ার
আগেই শ্রমিকরা ফ্যান জোনে ভিড় জমাতে শুরু করেন।
প্রাণবন্ত পরিবেশে সুস্বাদু বিরিয়ানির সুগন্ধ এক ভিন্ন মাত্রাই দিয়েছিল। কিন্তু
রেফারীর বাঁশি বাজার পর থেকেই তাদের পুরো মনোযোগ চলে যায় বড় পর্দায়। স্বভাবতই কাতারের
পক্ষেই গলা ফাটাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু ইকুয়েডরের কাছে ২-০ গোলে হেরে তাদের হতাশ করে
কাতার।
টিকিটের চড়া দাম
আল জাজিরার সঙ্গে
যারা কথা বলেছেন, তাদের সবারই স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার সামর্থ্য। কেননা সর্বসাকুল্যে
তাদের বেতন ২০০০ কাতারি রিয়ালের (প্রায় ৫৭ হাজার টাকা) কিছুটা বেশি। গ্রুপপর্বের ম্যাচগুলোর
টিকিট মূল্য থেকে ৪০ কাতারি রিয়াল থেকে শুরু করে ৮০০ রিয়াল পর্যন্ত। ৪০ রিয়ালের মূল্যের
টিকিট প্রচুর চেষ্টা করেও কিনতে পারেননি অনেকেই।
পিটার বলেন, ফিফা
ও সরকারের উচিত ছিল টিকিটের ১০ শতাংশ স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য। মোটা অংকের বেতন পাওয়া
লোকেরাও সস্তা দামের টিকিট কিনছেন। প্রতিদিন চেষ্টা করেও আমি টিকিট পাইনি, তাই হাল
ছেড়ে দিয়েছি।