গমের বৈশ্বিক উৎপাদন পূর্বাভাস বাড়িয়েছে মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)। সংস্থাটির প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে বিশ্বজুড়ে ৭৮ কোটি ৮৯ লাখ ৪০ হাজার টন গম উৎপাদন হতে পারে, এর আগের প্রাক্কলনের তুলনায় যা ৫০ লাখ টন বেশি। তবে উৎপাদন বাড়লেও মৌসুমের সমাপনী মজুদ ২১ লাখ টনেরও বেশি কমার আশঙ্কা করছে ইউএসডিএ। মজুদের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ২৬ কোটি ৭২ লাখ টনে। ইউএসডিএ সম্প্রতি কৃষিপণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ ও চাহিদা প্রাক্কলন শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয় অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ব্রাজিল ও কাজাখস্তানে গম উৎপাদন বাড়ছে।
আগের মাসের তুলনায় অস্ট্রেলিয়ায় গম উৎপাদন পূর্বাভাস ১০ লাখ টন বাড়িয়েছে ইউএসডিএ। নতুন পূর্বাভাসে উৎপাদনের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৯০ লাখ টন। পাশাপাশি কাজাখস্তানের উৎপাদন পূর্বাভাসও বাড়ানো হয়েছে। ব্রাজিলে উৎপাদন পাঁচ লাখ টন বেড়ে ১ কোটি ৪ লাখ টনে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে ভারতের উৎপাদন ১০ কোটি ৪০ লাখ টনে ঠেকতে পারে। এর আগের পূর্বাভাসে ১০ কোটি ৩০ লাখ টন উৎপাদনের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল।
রাশিয়া, ইউক্রেন, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য উৎপাদন পূর্বাভাস অপরিবর্তিত রেখেছে ইউএসডিএ। তবে বৈরী আবহাওয়া বিশেষ করে খরার প্রভাব সত্ত্বেও আর্জেন্টিনায় উৎপাদন পূর্বাভাস বাড়িয়েছে সংস্থাটি। আগের পূর্বাভাসে ১ কোটি ২৫ লাখ টন উৎপাদনের কথা বলা হলেও নতুন পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে ১ কোটি ২৯ লাখ টন। এদিকে শস্যটির বৈশ্বিক রফতানি পূর্বাভাস আগের চেয়ে ১০ লাখ টন বাড়ানো হয়েছে। মোট রফতানির পরিমাণ ২১ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার টনে উন্নীত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউএসডিএর প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়া ২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে ২ কোটি ৮৫ লাখ টন গম রফতানি করতে সক্ষম হবে, যা ফেব্রুয়ারিতে দেয়া পূর্বাভাসের চেয়ে পাঁচ লাখ টন বেশি। ব্রাজিলের ক্ষেত্রে রফতানি দাঁড়াতে পারে ৪৪ লাখ টনে। এর আগের পূর্বাভাসে ৩৯ লাখ টনের কথা বলা হয়েছিল। তবে চলতি মৌসুমের জন্য আর্জেন্টিনার রফতানি পূর্বাভাস কমানো হয়েছে। দেশটির প্রাক্কলিত গম রফতানি ৭৫ লাখ টন থেকে কমে ৬৫ লাখ টনে নামতে পারে বলে মনে করছে ইউএসডিএ। এছাড়া ভারতের রফতানি পূর্বাভাসও চার লাখ টন কমিয়ে ৫৫ লাখ টন ধরা হয়েছে। এ মৌসুমে কাজাখস্তানে গম উৎপাদন ১ কোটি ৬৪ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে, যা আগের পূর্বাভাসের চেয়ে ২৪ লাখ টন বেশি। অন্যদিকে দেশটির রফতানি ১৫ লাখ বেড়ে ১ কোটি ৫ লাখ টনে পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে। মধ্য এশিয়ার দেশগুলোয় ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার কারণে কাজাখস্তানের গম রফতানি বাড়ার সম্ভাবনা দেখছে ইউএসডিএ।
প্রসঙ্গত, এক বছর আগে রাশিয়া যখন ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে, তখন থেকেই বিশ্ববাজারে গমের সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়। গমের বৈশ্বিক সরবরাহের এক-তৃতীয়াংশই আসে দেশ দুটি থেকে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে যুদ্ধ ও রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে কৃষ্ণসাগর দিয়ে গমের সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। জুলাইয়ে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি হলে রফতানি আবারো চালু হয়। কিন্তু এখনো সেটি যুদ্ধ-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরতে পারেনি।